ভোলায় রসালো ফল মাল্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে

587

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২৮ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : জেলায় মাল্টা চাষে চাষিদের আগ্রহ বেড়েছে। গত ৩ বছর আগে এখানে সীমিত আকারে মাল্টা চাষ শুরু হলেও বর্তমানে তা বেশ সম্প্রসারণ লাভ করেছে। প্রথম বছর ২০১৭ সালে ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। আর বর্তমানে ৩১ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। দেশে উদ্ভাবন হওয়া বারি মাল্টা-১ জাতের এই রোসালো সুসাদু ফল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে উপকূলীয় এই জেলায়। আমাদের দেশী এই মাল্টা বিদেশী মাল্টার চাইতে আকারে বড় এবং বেশি রসালো হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। পুষ্টিগুণে ভরপুর মাল্টা চাষে অনেকে পেয়েছেন সফলতা। সব মিলিয়ে এখানে মাল্টা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এক সময় মনে করা হতো মাল্টা বা লেবু জাতীয় ফল পাহাড়ি এলাকাতেই শুধু ভালো হয়। কিন্তু পরে পিরোজপুরে এর সফল চাষ হওয়ায় এই অঞ্চলকে মাল্টার জন্য বেশ উপযোগী মনে করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে উদ্ভাবন হওয়া জাতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও স্থানীয় আবহাওয়ার সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং লাভটাও অধিক হয়। তাই প্রতি বছরই এখানে মাল্টা চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বাসস’কে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যেগে ২০১৭ সালে বাংলাশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’র আবিস্কৃত বাঢ়ি মাল্টা-১ জাতের ৬৩টি চারা পরীক্ষামূলক বাপ্তা ইউনিয়নে চাষ শুরু হয়। প্রথম বছর সফল হওয়াতে পরের বছর অনেকেই মাল্টা চাষে ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রথম বছর সদরে ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও চলতি অর্থবছরে ২৫ হেক্টর জমিতে পৌঁছায়। প্রতি বছরই এই চাষ সম্প্রসারণ এবং চাষিদের মধ্যে ইচ্ছা তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মাল্টা চারা কলম পদ্ধতিতে হওয়ায় প্রথম বছরই ফলন আসে। একটি মাল্টা গাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মসে গাছে ফুল আসে আর বাজারে তোলা হয় সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। অধিক ফলনের জন্য প্রথম দুবছর গাছ থেকে মাল্টা ফল ফেলে দিতে হয়। বর্তমানে অধিকাংশ মাল্টা চাষিই ফল বাজারে বিক্রির অপেক্ষায়। গাছের যে কোন রোগ বালাই দমনে চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়। আশা করছেন তারা ভালো মূল্য পেয়ে লাভবান হবেন।
উপজেলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মাল্টা চাষি মনিরুল ইসলাম বাসস’কে জানান, প্রথম থেকেই তার মাল্টা চাষে আগ্রহ। তাই ২০১৮ সালের দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২ একর ১০ শতাংশ জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন। ১ হাজার গাছের চারা রোপন করেন তিনি প্রতি পিস ১০০ টাকা দরে মোট ১ লাখ টাকায়। এছাড়া জমি প্রস্তুতে আর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ হয় তার।
তিনি জানান, এবছর গাছ নতুন থাকায় প্রায় ৪০০ গাছে ফলণ এসেছে। ফলণও এসেছে ভালো। আগামী সেপ্টেম্বরে বাজারে তুলতে পারবেন। আশা প্রকাশ করেন, এই ৪’শ গাছ থেকে ৩ টন মাল্টা উৎপাদন করতে পারবেন। প্রতি কেজি দেড়শ টাকা পেলে সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে স্বপ্ন তার। মূলত গাছের চারা ছোট থাকায় পরিচর্যায় পরিশ্রম বেশি হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, গাছের চারা ৫ বছর হলে পরিশ্রমও কমে যাবে। তাই তখন লাভটা বেশি হয়। একটি মাল্টা গাছ সাধারণত ১৫ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ফল দেয় বলে জানান তিনি।
আরেক মাল্টা চাষি সদরে বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব বাসস’কে বলেন, তার মাছের খামারের পাড়ে ২০০ মাল্টা গাছ রয়েছে। ২০১৭ সালে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় প্রথম তার খামারে মাল্টা গাছ রোপন করা হয়। এছাড়া সরকারিভাবেও বেশ কিছু গাছের চারা পান তিনি।
তিনি বলেন, গত বছর থেকেই তার ফল বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি মাল্টার ফলণ এসেছে। আশা করছেন এবছর ৪ হাজার কেজি মাল্টা উৎপান করতে পারবেন। এই মাল্টাটা কিন্তু পাকা হলেও এর রং বদলায় না। অর্থাত সবুজই থেকে যায়। তাই কেউ কেউ মনে করতে পারে এটা কাঁচা। কিন্তু যে একবার কিনে খায় সে আবার কিনতে আসে।
পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ের গুপ্তমুন্সি এলাকার ফয়সাল আবেদিন রাকিব। পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি বলেন, মাল্টায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবছর তিনি ২’শ ৩০ শতাংশ জমিতে মাল্টা ও অন্যান্য ফলের বাগান করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে উদ্বোদ্ধ করার জন্য ৪০টি মাল্টা চারা বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। তার এখানে মোট ৫০০ কলমের চারায় প্রতিপিস ফল ধরা অবস্থায় ১৮০ টাকা দরে কেনা হয়েছে।
তিনি বলেন, মূলত এখন বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের ভালো একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে ভোলাতে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। আগামীতে তার এই মাল্টা বাগান আরো প্রসারিত করা হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হরলাল মধু বাসস’কে জানান, মাল্টা চাষ মূলত লাভজনক একটা ফল চাষ। এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনেকেই নিজ উদ্যোগে আমাদের পরামর্শে মাল্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আমরা তাদের এই উদোগকে সাধুবাদ জানাই। চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ সব ধরনের পরামর্শ সেবা প্রাদান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান জেলার কৃষি বিভাগের সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা।