জমে উঠেছে কোরবানির পশুর ডিজিটাল হাট : লক্ষাধিক রেজিস্ট্রেশন

493

॥ মো. সাজ্জাদ হোসেন ॥
ঢাকা, ২৭ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটে এখনো বেচাকেনা শুরু না হলেও জমে উঠেছে ডিজিটাল হাট।
শুধুমাত্র সরকারি দু’টি ডিজিটাল প্লাটফর্মেই লক্ষাধিক পশু রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে রোববার রাতে টেলিফোনে বাসসকে জানিয়েছেন তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা (আইসিটি বিভাগ) এটুআই, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ই-ক্যাবের সহযোগিতায় অনলাইন পশুর হাট ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ চালু করেছি। এই ডিজিটাল পশুর হাটে এবার ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের “ফুড ফর নেশন” ও “একশপ”-এ দুটি প্লাটফর্মেই ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। শেষের কয়েকটা দিন আরও বেশি রেজিস্ট্রেশন ও ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘শুধু এই দু’টি প্লাটফর্মেই নয়, আরও অনেকগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। গ্রাম পর্যায়েও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ফলে আমরা আশাবাদী এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই ডিজিটাল হাট জীবন ও জীবিকা দুটোই রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
প্রযুক্তির এই সুযোগ যেন সকলে ব্যবহার না করে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের যে সুফল তা এখন দেশের ১৭ কোটি মানুষ ভোগ করছে। এই ডিজিটাল হাট আরেকটি বড় সফলতা।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে এসব ডিজিটাল হাট জমে উঠেছে। করোনাকালে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এসব ডিজিটাল মাধ্যম পরিবর্তনের মূলে কাজ করছে। মানুষ এখন ঘরে বসেই, কোনও ধরণের আতঙ্ক ছাড়াই কোরবানির পশু কিনতে পারছেন।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, স্মার্টফোন সেটের ব্যবহার বৃদ্ধি, পেমেন্ট পদ্ধতি সহজ হওয়া এবং পেমেন্ট গেটওয়েগুলো জটিলতামুক্ত হওয়ায় এসব মাধ্যম ব্যবহার করে লোকজন অনলাইন থেকে কোরবানির পশু কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’
প্রতিমন্ত্রী জানান, এরইমধ্যে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে, যেখানে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। যারা গ্রুপ তৈরি করেছেন তারাই ক্রেতা তারাই বিক্রেতা। গ্রুপের সদস্যরা কোরবানির পশু সংগ্রহ করছেন, আবার তারাই নিজেদের জন্য কিনে নিচ্ছেন।
ই-কমার্স প্লাটফর্মে (মার্কেটপ্লেস), ই-কমার্স সাইট, ওয়েবসাইট, ফেসবুকভিত্তিক সাইটগুলোতে ইতোমধ্যে কোরবানির পশুর বুকিং ও বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। দেশের ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও ক্রেতারা কোরবানির পশুর বুকিং দিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদের এক বা দু’দিন আগে ক্রেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে কোরবানির পশু পৌঁছে দেবে।
এবারের কোরবানির ঈদ অন্য সময়ের মতো নয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। তাই অনলাইনে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এবার সরকারও এগিয়ে এসেছে। রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশে বসিয়েছে ডিজিটাল হাট। ‘ফুড ফর নেশন’ ও ‘একশপ’-এর মাধ্যমে এবার সরকারিভাবে কোরবানি পশু বিক্রি করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার, অনেক জেলার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এবার স্থানীয়ভাবেও অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইট, অ্যাপস ইত্যাদি। অন্যদিকে ফেসবুকনির্ভর পেজ তো আছেই।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কোরবানির পশু বিক্রির অনলাইন প্লাটফর্ম ডিজিটাল হাট (www.digitalhaat.net) চালু হয়েছে। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, আইসিটি বিভাগ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এই ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থা করেছে।
উত্তর সিটি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানান, ক্রেতারা চাইলে ডিজিটাল হাট থেকে ন্যায্যমূল্যে কোরবানির পশু কিনে ঢাকার ৫টি এলাকা থেকে মাংস প্রক্রিয়া করে নিজ-নিজ ঠিকানায় ডেলিভারি নিতে পারবেন।
গত ১১ জুলাই এই ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করা হয়। এসময় জানানো হয়, ডিজিটাল হাটের আওতায় গরু বিক্রি ছাড়াও প্রায় ২ হাজার গরু জবাই করে এবং মাংস প্রক্রিয়া করে বাসায়-বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঈদের দিন ৪০০, দ্বিতীয় দিন ১ হাজার ও তৃতীয় দিন ৬০০ গরু কোরবানি করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে।
এছাড়াও বেঙ্গল মিট (qurbani.bengalmeat.com), বিক্রয় ডট কমেও (bikroy.com), দেশিগরুবিডি ডট কম (http://deshigorubd.com), ই-কমার্স প্লাটফর্ম আজকেরডিল ডট কম (ajkerdeal.com), প্রিয়শপ ডট কমের (priyoshop.com) সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এবারও কোরবানির পশুর আয়োজন করেছে। তাদের সাইটে গরুর ছবি, ওজন, উচ্চতা, জাত, কী খায়, ভ্যাকসিন কবে দেয়া হয়েছে, ডেলিভারি কীভাবে পাওয়া যাবে, দাম পরিশোধের পদ্ধতি সব তথ্য দেয়া আছে।