বরগুনায় উদ্যান-কৃষি বেড়েছে

611

বরগুনা, ২৬ জুলাই, ২০২০ (বাসস): করোনাকালীন অবসরে গ্রামীণ মানুষের মধ্যে উদ্যান-কৃষির প্রবণতা বেড়েছে। গ্রামে উঠোন, ঘরের পিড়া ও আঙ্গিনা, পুকুর পাড়, রাস্তার ঢাল, আবার মফস্বল শহরের মানুষও ছাদ কিংবা বারান্দায় সৌখিনভাবে কৃষি করে শখ মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের চাহিদার একটা অংশও মেটাচ্ছেন।
উদ্যোগী মানুষেরা জানিয়েছেন, বাঁচতে হলে খাদ্য প্রয়োজন। ভাতের সঙ্গে কম হলেও একটু শাঁক-সবজি দরকার। শহরে সুপারশপ থেকেই হয়তো প্রয়োজনীয় সবজি কেনা সম্ভব। কিন্তু গ্রামে হাট-বাজার ছাড়া সবজি কেনা প্রায় অসম্ভব। হাট-বাজারে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা কঠিন। বিশেষ করে যে এলাকায় করোনার প্রকোপ বেশি, সেই এলাকার মানুষ হাট-বাজারে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামগুলোর অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই সবজি চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। ঘরের আঙিনা, পুকুরপাড়, পার্শ্ববর্তী বাঁধ বা রাস্তার ঢালে তারা শাঁক-সবজি চাষ করছেন। শহর বন্দরের অধিবাসীরা বেছে নিয়েছেন ছাদ ও একটুকরো বারান্দাকে।
পেশায় ব্যবসায়ী বরগুনা পৌরসভার চরকলোনীর বাসিন্দা মারুফ রহমানের কৃষিকাজে অভ্যাস ছিল না। বর্তমানে তিনি নজর দিয়েছেন উদ্যান কৃষিতে। বাড়ির আঙিনা ও ঘরের ছাদে গড়ে তুলেছেন সবজি বাগান। মারুফ জানিয়েছেন, আমাদের দেহে সুষম পুষ্টি প্রয়োজন। এ জন্য শাক-সবজির বিকল্প নেই। পাশাপাশি এ দুর্যোগের সময়ে আয়ও হচ্ছে উদ্যান কৃষির মাধ্যমে। আমি নিজে কৃষিকাজ করছি। ভালো লাগছে। অন্যদেরও উৎসাহ দিচ্ছি। এভাবে বরগুনা কড়তলার স্কুল শিক্ষক মাহাতাব উদ্দিন, পাথরঘাটা উপজেলার সাখাওয়াত হোসেন, আমতলীর মুকুল বেগম এমন অনেকেই রয়েছেন যারা এ করোনাকালে হয়ে উঠেছেন কৃষি উদ্যোক্তা।
একাধিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে পরিবারগুলো কৃষিভিত্তিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না, তারাও এখন কৃষিতে ঝুঁকেছে। নিজেদের পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ এবং করোনাকালে ঘরে বন্দিজীবনে সময় কাটাতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন উদ্যান কৃষিকে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশের অনাবাদি জমি যেন আবাদের আওতায় আসে সেই লক্ষ্যে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সরকার ইতোমধ্যেই আহ্বান জানিয়েছে, পতিত জমিতে সবজি বা ফসল ফলানোর। কারণ করোনা মহামারি কেটে গেলে দুর্ভিক্ষের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তখন যেন দেশের মানুষ কষ্ট না পায়- এ কারণেই এ আহ্বান। এমন আহ্বান আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছে উদ্যান কৃষিকে।
বরগুনার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জানান, উদ্যান কৃষির প্রসারে কৃষি কর্মকর্তারা মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছেন। করোনার এ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি পরিবারের মাঝে ১২ রকমের সবজির বীজ সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, স্বল্প জায়গায় চাষের জন্য অনেক পরিবারকে পরামর্শ, সার, ওষুধসহ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপকূলজুড়ে উদ্যান কৃষির পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বরগুনা জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউর রহমান জানান, উদ্যান-কৃষি দেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। মানুষ উদ্যান কৃষিতে এগিয়ে আসলে কৃষি সম্প্রসারিত হবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক সহকারি পরিচালক ডা. মোস্তাক আল মেহেদি বলেন, ছাদবাগান কিংবা আমাদের অনেকের বারান্দা-বাগানগুলোতে যেমন ফল উৎপাদন করা হচ্ছে তেমনি এ বাগানগুলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী। উদ্যান কৃষিতে দেয়া কায়িক শ্রম এবং বাগান থেকে পাওয়া মানসিক প্রশান্তি দৈনন্দিন জীবনে মানুষের স্বাস্থ্যগত গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং ভৌগোলিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের সুরক্ষা লক্ষ্যে সবুজ অফিস ব্যব¯হাপনার অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছাদে দেড়শতাধিক ছাদ-বাগান “সবুজ কানন” রয়েছে।
বরগুনার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পতিত জমির পরিকল্পিত ব্যবহারের আমরা আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারি। সকলে একটু সচেতন ও উদ্যোগী হলে খাদ্য চাহিদা, মানসিক প্রশান্তি ও স্বল্প পরিসরে হলেও অর্থনৈতিক সুবিধা বাড়বে উদ্যান কৃষির মাধ্যমে।