সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে : কৃষিমন্ত্রী

396

ঢাকা, ২৫ জুলাই ২০১৮ (বাসস): অকৃষিকাজে কৃষি জমির ব্যবহার রোধে জেলা প্রশাসকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘অকৃষিকাজে কৃষি জমির ব্যবহার রোধে সচেতন থাকবেন। যে সকল জমিতে সেচ কম প্রয়োজন হয় সে সকল জমি এবং ৩ ফসলী জমি কৃষি কাজের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি এবং জনগণের দোরগোড়ায় কৃষি উপকরন ও প্রণোদনা পৌঁছানোর ফলে কৃষি উৎপাদন ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আজ বুধবার মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৮ এর দ্বিতীয়দিনের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মতিয়া চৌধুরী জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণের ও নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ তথা সার, বীজ ও সেচ খাতে সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছেনোর ফলে কৃষি উৎপাদন ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টা, পিঁয়াজ, শাক-সবজি এবং পাট এর আশাতিত উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিতে সফল বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৪র্থ স্থান, আলু উৎপাদনে ৭ম স্থান এবং সবজী উৎপাদনে ৩য় স্থান অর্জনকারী দেশ।
কৃষি বিপ্লবে বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরের ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিকটন মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করে সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষকদের সরবরাহ করা হয়েছে। সেচের জন্য ৩৪৩ দশমিক ৩৭ কি.মি. খাল পুনঃখনন, ১৮৭ কিলোমিটার সেচনালা নির্মাণ, ২টি রাবার ড্যাম নির্মাণ, ২টি হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ চলমান আছে, ২৭টি সোলার প্যানেল স্থাপন ৩ শত ৯২ টি সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএডিসির মাধ্যমে ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন নন-ইউরিয়া সার আমদানি করে ১০ লক্ষ ১৭ হাজার মেট্রিকটন সার কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে।সার সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৩টি প্রি-ফেব্রিকেটেড ষ্টিল গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বর্তমান সরকার সার, ডিজেল, বিদ্যুৎ, ইক্ষু ইত্যাদি খাতে ৫ হাজার ২শ’ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।
তিনি বলেন, খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং হাওর এলাকায় সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকায় সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ডাল, তেল, মসলা ও ভুট্টাসহ ২৪টি ফসল উৎপাদনের জন্য সুদ ভর্তুকির আওতায় ২০১১-১২ সাল থেকে ৪ শতাংশ সুদে বিশেষ কৃষিঋণ প্রদান চালু করা হয়েছে এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কারণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তার লক্ষ্যে ৬১টি জেলায় ৫ লাখ ৪১ হাজার ২০১ জন কৃষকের মাঝে ৫৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা প্রণোদনা বাবদ বিতরণ করা হয়েছে।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রদান এবং কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে কৃষি উপকরণ সরবরাহের জন্য কৃষকদের ২ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ টি কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকদেরকে বিভিন্ন সরকারি সহায়তা, ব্যাংকের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য ১০ টাকার বিনিময়ে ৯৭ লাখ ৩১ হাজার ৮০০টি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘৮১টি গুদামে ৫ হাজার ৫ মেট্রিক টন শস্য জমার বিপরীতে ৪ হাজার ৩৮৮ জন কৃষককে ৭ কোটি ২ লক্ষ ১১ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পানি সম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার এসময় উপস্থিত ছিলেন।