প্রাণের সন্ধানে নাসার রোভার পারসিভিয়ারেন্স ৩০ জুলাই মঙ্গলের পথে যাত্রা করবে

519

ওয়াশিংটন, ১৫ জুলাই, ২০২০ (বাসস ডেস্ক) : মঙ্গল গ্রহের ভূমিতে প্রাচীন অণুজীবের সন্ধানে নাসার সর্বাধুনিক মার্স রোভার পারসিভিয়ারেন্স ৩০ জুলাই মঙ্গলের উদ্দেশে পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা সাড়ে তিন’শ কোটি বছর আগে মঙ্গলের নদী অববাহিকায় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।
এই আন্ত:গ্রহ ভ্রমণে ছয়মাস সময় লাগবে।
স্পোর্ট কারের (এসইউভি) সমান এই রোভার অক্ষত অবস্থায় মঙ্গলের মাটিতে পৌঁছালে এটি নমুনা সংগ্রহ শুরু করবে এবং পাথর ও মাটির নমুনা সংরক্ষণ করবে। পরবর্তী মিশনে এই নমুনা পৃথিবীতে আনা হবে এবং ২০৩১ সালে পৃথিবীতে পৌঁছাবে।
পারসিভিয়ারেন্স আগে গত শতকের নব্বই দশকের শেষের দিকে আমেরিকা আরো ৪টি রোভার মঙ্গলে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে স্যাটেলাইট ও সারফেস প্রোব পাঠানো হয়, এরফলে আমরা জানতে পারি এই লালগ্রহ সব সময় শীতল ও বৈরি ছিলনা।
পারসিভিয়ারেন্স মঙ্গলের মাটি থেকে সংগ্রহীত ফসিল ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবের নমুনা পরীক্ষায় জানতে পারবে প্রতিবেশী এই গ্রহে কোন এলিয়েন ছিল কিনা।
কোভিড ১৯ মহামারির কারণে নাসা কয়েক মাস ধরে টেলিওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে যাতে ২৭০ কোটি ডলারের নির্ধারিত এই মিশন বাতিল না হয়।
নাসার প্রধান জিম ব্রাইডস্টাইন বলেছেন, প্রতি ২৬ মাসে পৃথিবী ও মঙ্গল একবার একই দিকে অবস্থান করে , এই সময়ই মিশন পরিচালিত হয়,আমরা এই সুযোগ হারাতে চাইনি।
যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ এরআগে মঙ্গলে আরো ৪টি রোভার পাঠিয়েছে ,এগুলো হলো,পাথফাইন্ডার, স্পিরিট, অপারচুনিটি ও কিউরিসিটি।
এরমধ্যে কিউরিসিটি এখনো সক্রিয় রয়েছে, অন্যগুলো যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিত্যাক্ত হয়েছে।
গত দুই দশকে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এক সময়ে মঙ্গলে সমুদ্র, নদী এবং লেক ছিল। কিউরিসিটি মঙ্গলে জৈব যৌগের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে তবে এর যন্ত্রপাতি বায়োলজিক্যাল প্রক্রিয়া বিশ্লেষণে সক্ষম ছিল না।
নাসার স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণে মাটি এবং পাথরের মলিকুলের উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করছে। বায়োলজিস্ট ও এ্যাস্ট্রোবায়োলজিস্টরা বুঝতে পেরেছেন এখানে পানির প্রবাহ ছিল এবং এই এলাকায় অতীতে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল।
২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পারসিভিয়ারেন্স মঙ্গলের প্রাচীন নদী জেজার খাদে অবতরণ করবে। তিন থেকে চার’শ কোটি বছর আগে এখানে কাদা,বালি ও পলি জমে লেকে পরিণত হয়েছিল।
তিন মিটার দীর্ঘ ছয় চাকার রোভারটির ওজন এক টন। এতে ১৯ টি ক্যামেরা, দুটি মাইক্রোফোন এবং একটি ২ মিটার দৈর্ঘের বাহু রয়েছে।
এটির গুরুত্বপূর্ণ যান্ত্রিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে দুইটি লেজার এবং একটি এক্সরে। এর মাধ্যমে পাথরের রাসায়নিক উপাদান এবং সম্ভাব্য জৈব যৌগ শনাক্ত করবে।
রোভারটিতে পরীক্ষামূলক একটি মিনি হেলিকপ্টার যুক্ত করা হয়েছে,এটির ওজন ১.৮ কিলোগ্রাম। নাসা আশা করছে এটি প্রথম কোন চপার অন্য গ্রহের আকাশে উড়বে।
পারসিভিয়ারেন্স পাথরের কোথায় অণুজীব রয়েছে সেটা হয়তো শনাক্ত করতে পারবে না।এটি নিশ্চিত করার জন্য নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসা হবে এবং কেটে অতি পাতলা টুকরো করে ল্যাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।