দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩৩ জন, সুস্থ ১,৭৯৬

282

ঢাকা, ১৫ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৯৬ জন।
গতকাল ৩৩ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৪৫৭ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের দিনের চেযে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০১ শতাংশ কম।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৯৬ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৩ হাজার ১১৪ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ৪ হাজার ৯১০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ২৩ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ হাজার ২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৩৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৩৭০ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৩ হাজার ৪৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ১৬৩ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৮০ হাজার ৪০২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৩০৮ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৮৮ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৩২০টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৭৯টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ২ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ৪৫৩ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৫৪৯টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৭ জন পুরুষ জন এবং ৬ জন নারী। মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৯৪০ জন; ৭৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং নারী ৫১৭ জন; ২১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায় ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৫ জন রয়েছেন। হাসপাতালে ২৭ জন এবং বাসায় ৬ জন মারা গেছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের শতকরা হার, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে দশমিক ৬৬ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের হার ৪৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে বিভাগওয়ারী ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ২২৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৩৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৩৮ জন, বরিশাল বিভাগে ৮৯ জন, সিলেট বিভাগে ১১০ জন, রংপুর বিভাগে ৮০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৬ জন।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৭ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ২৭৮টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০৯ জন এবং খালি আছে ৩৩টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩০৭ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২০ জন এবং খালি আছে ১৯টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৭০২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮০২ জন, খালি আছে ৫ হাজার ৯০০টি শয্যা। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৩ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৭৬ জন। খালি আছে ১১৭টি আইসিইউ শয্যা। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬৪টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ১৩৬ জন এবং খালি আছে ১০ হাজার ৫২৮টি শয্যা। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৭৪টি, রোগী ভর্তি আছে ২০৫ জন এবং খালি আছে ১৬৯টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৭৯টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৫৮টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১১৫টি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেম অনেক হাসপাতালে চালু হয়েছে, অনেক হাসপাতালে চালুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৯৪৯ জন ও আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৪৫ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে এসেছেন ৩৯ হাজার ৮০ জন। এ পর্যন্ত ছাড়পত্র পেয়েছেন ২১ হাজার ২১৬ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৭ হাজার ৮৬৪ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৯৩১ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৩ জন ছাড় পেয়েছেন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬১ হাজার ৬৩৭ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস মজুদ আছে ১১ লাখ ৪০ হাজার ২৪২টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক মজুদ আছে ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮টি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ১১ লাখ ১০ হাজার ৪৪টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ৭ লাখ ১২ হাজার ১১৫টি মজুদ রয়েছে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০৩টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫১টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৮৫ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ৪ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৭১৩ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৬০১ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৪ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৯৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৪২ জন এবং এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯শ’ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৪ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৭৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৯ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৬৩৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭০ হাজার ২৮৮ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।