সাহেদকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করছে র‌্যাব

338

ঢাকা, ১৫ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : র‌্যাব সাহেদকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান পরিচালনা করছে। র‌্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সারোয়ার আলম ঘটনাস্থলে আছেন।
দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১১ নং সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ৬২ নম্বর কুমিল্লা বহুতল এপার্টমেন্টে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে র‌্যাব সূত্রে জানা যায়।
র‌্যাব আজ বুধবার ভোরে রিজেন্ট প্রুপ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা ইছামতি নদী থেকে আটক করে।
র‌্যাব সদস্যরা হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রথমে তাকে ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দরে আনা হয়। এরপর সাহেদকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য ঢাকার র‌্যাবের সদর দফতরে নেয়া হয়। র‌্যাবের সদর দফতরে র‌্যাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে জিঞ্জাসাবাদ করেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরায় এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
বুধবার র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া ইউংয়ের মুখপাত্র (পরিচালক) লেফটেন্ট্যান্ট কর্ণেল আশিক বিল্লাহ বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা কোমরপুর গ্রামের ইছামতি নদী দিয়ে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে পালিয়ে যাবার চেষ্টাকালে সাহেদকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশী অবৈধ পিস্তল ও ম্যাগজিনভর্তি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র‌্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সাহেদ ছদ্মবেশে বোরকা পরে নৌকা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তার বাড়িও সাতক্ষীরায়। কিন্তু তিনি তারই জেলায় ছদ্মবেশে বিভিন্ন যানবাহনে চলাফেলা করেন।
আজ বুধবার র‌্যাব সদর দপ্তরে এ ব্যাপারে দুপুর ৩ টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা। সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্স র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য রাখবেন।
প্রতারক সাহেদ করিম গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্ট্যান্ট কর্লেল সারোয়ার বিন কাশেম। এসময় তার সাথে গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
আজ বুধবার সকালে ঢাকার তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে র‌্যাবের এডিজি অপারেশন কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন,গত ৯ দিন ধরে আমরা সাহেদকে (তাকে) ফলো করছি। কিন্তু সে ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করছিল। এজন্য কয়েকবার আমরা তার খুব কাছাকাছি যাওয়ার পরও ধরতে পারিনি।
তিনি বলেন, এছাড়া সে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও ফেলে দিয়েছিল। অবশেষে আজ বুধবার ভোররাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে ইছামতি নদী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে হেলিকপ্টারে করে তাকে সাতক্ষীরা থেকে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়েছে।
গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় এলিট ফোর্স র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সারোয়ার আলম। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।পরবর্তীতে এঘটনায় র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করে। গত ৮ জুলাই দিবাগত রাতে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে সাহেদের প্রধান সহযোগী তারেক শিবলীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। হেফাজতে নেয়া হয় টিভি নাটকের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘টেলিহোম’র প্রধান ও সাহেদের ভায়রা মোহাম্মদ আলী বশিরকে।
সাহেদের প্রতারণা কাজের অন্যতম সহযোগি মাসুদ পারভেজকে মঙ্গলবার রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করে সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দায়ের করা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্থান্তর করা হয়েছে।
তদন্তকারী দলের সদস্যরা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর রিজেন্ট হাসপাতালের মূল অফিসে অভিযান চালিয়ে সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে। ওই সময় তার আরও ২৩ মামলার হদিস মিলেছে। এখনও পর্যন্ত প্রতারক সাহেদের বিরুদ্ধে মোট ৫৯টি মামলার হদিস পেয়েছে র‌্যাব, ডিবি, ও পুলিশ।
বর্তমানে মো. সাহেদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকলেও তার আসল নাম মো: শাহেদ করিম, আর বাবার সিরাজুল করিম ও মাতার নাম মৃত সুফিয়া করিম। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়।
জানা গেছে, ২০১০ সালের দিকে সাহেদ ধানমন্ডি এলাকায় বিডিএস ক্লিক ওয়ান এবং কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটি (কেকেএস) নামে দু’টি এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে গা ঢাকা দিলে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১১ সালে তাকে প্রতারণা মামলায় একবার গ্রেফতারও করা হয়েছিল। পরে সে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। এরপর প্রতারণার অর্থ দিয়ে তিনি রিজেন্ট গ্রুপ নামে ব্যবসায় শুরু করেন। চালু করেন রিজেন্ট হাসপাতাল। যদিও এর কয়েক বছর আগেই হাসপাতালের অনুমোদন নিয়েছিলেন তিনি।
উত্তরা ও মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতাল এবং রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের তিনটি ভবনই বিভিন্ন ফন্দি করে ভাড়া নেন সাহেদ। মিরপুরের ১২ নম্বরের যে বাড়িটিতে হাসপাতাল করা হয়েছে সেটি অন্য আরেকজনকে দিয়ে ভাড়া করিয়েছিলেন। পরে সেখানে জোর করে হাসপাতাল স্থাপন করেন। দুই বছর ধরে এর ভাড়াও দেননি সাহেদ। উত্তরাতেও একই অবস্থা। ভুক্তভোগী বাড়িওয়ালা উকিল নোটিশ দিয়ে ও থানায় নালিশ করেও তাকে সরাতে পারেননি। এদিকে সাহেদের সকল ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
এছাড়া সাহেদ করিমের দুর্নীতির অনুসন্ধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সোমবার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি দলও গঠন করা হয়েছে। কমিশনের উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন,মো. নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মো. গোলাম মাওলা।
প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান টিম প্রধান উপ-পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিকের সই করা চিঠি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান বরাবর পাঠানো হয়েছে।
গতকাল উত্তর সিটি করপোরেশন, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর, উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের উত্তরা শাখার ব্যবস্থাপক, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিমানবন্দর শাখা ব্যবস্থাপক, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এবং এনবিআর’র কর অঞ্চল-৯ এর উপ-কর কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।