শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার কমেছে, সুস্থতা বেড়েছে

388

ঢাকা, ১২ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়লেও শনাক্তের বিবেচনায় মৃত্যুর হার কমেছে। বেড়েছে সুস্থতার হার।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান।
নাসিমা সুলতানা জানান, করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০৬ শতাংশ কমেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে আজ ৪৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
গতকালের চেয়ে আজ ১৭ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩০ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৩৫২ জন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৫৮০ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৩ হাজার ৯৫২ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৬২৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯৩ হাজার ৬১৪ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার ২ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১১ হাজার ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৬৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২০ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১১ হাজার ১৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৬৮৬ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৪০ হাজার ৫২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১১ হাজার ২১০ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৪৭৫ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ২৬৫টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৭৭টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৫৯ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১১ হাজার ১৯৩ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১৩৪টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৮৬০ জন এবং নারী ৪৯২ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। মৃত্যুবরণকারী ৪৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন, খুলনা বিভাগে ৬ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৪৩ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের শতকরা হার, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে দশমিক ৬০ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের হার ৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে বিভাগওয়ারী ঢাকা বিভাগে ৫০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১০৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ২০২টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০৩ জন এবং খালি আছে ৩৯টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩৪৪টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২০ জন এবং খালি আছে ১৯টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৩৮ জন, খালি আছে ৫ হাজার ৮৬৪টি শয্যা। সারাদেশে আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৮৭ জন। খালি আছে ১০৬টি আইসিইউ শয্যা। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬৪টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ২৫৪ জন এবং খালি আছে ৪ হাজার ৪১০টি শয্যা। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৭৪টি, রোগী ভর্তি আছে ২১০ জন এবং খালি আছে ১৬৪টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৭৫টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৫৮টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১০৫টি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সিস্টেম অনেক হাসপাতালে চালু হয়েছে, অনেক হাসপাতালে চালুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৩৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৭ হাজার ৩১৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯০৯ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৯ হাজার ১৮৬ জন। এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশন করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০৫ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৫৩১ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৪ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৯০০ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৭১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৮৩ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস মজুদ আছে ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৩৫৭টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক মজুদ আছে ৬৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৪টি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬০টি এবং গগলস ১৩ লাখ ১২ হাজার ২০টি মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৮৮টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৪টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৭৪ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ২ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৭৫৩ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার ৯৮১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬০৮ জন এবং এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৯৯০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৯৮৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ২৩ লাখ ২২ হাজার ৩৯৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ২৮৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৫ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।