২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩০ জন, মোট সুস্থ ৮৮,০৩৪

510

ঢাকা, ১১ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৩০৫ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৭ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৭ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬২৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ২৩৪ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৮৬২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮৮ হাজার ৩৪ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১১ হাজার ১৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৮৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২৬৩ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৩ হাজার ৪৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৯৪৯ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ লাখ ৮১ হাজার ১২৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪৭৫ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৭৭ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ২ হাজার ৯০২টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৭৭টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ১৯৩ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ৪৮৮ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২ হাজার ২৯৫টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৮২৪ জন এবং নারী ৪৮১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় ৭৯ দশমিক ১৩ শতাংশ পুরুষ ও ২০ দশমিক ৮৭ শতাংশ নারী। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন রয়েছেন।
নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ১৮ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় ১ জনকে। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের শতকরা হার, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে দশমিক ৬১ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের হার ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে বিভাগওয়ারী ঢাকা বিভাগে ৫০ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৪ দশমিক শূন্য ৯৯ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৯৪ জন এবং শয্যা খালি আছে ৪ হাজার ১১১টি। ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৪২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১০৫ জন এবং খালি আছে ৩৭টি শয্যা। ঢাকা মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ১৫০টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩৩১ জন এবং শয্যা খালি আছে ৩২৬টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২১ জন এবং খালি আছে ১৮টি শয্যা। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভেন্টিলেটর সংখ্যা ৩৮টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৪৫টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৮৯ জন। খালি আছে ১০ হাজার ৩৬৫টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯৪টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২২৪ জন। খালি আছে ১৫০টি আইসিইউ শয্যা। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৭৫টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ১৪৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১০৮টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮৫৩ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৭ হাজার ৪৯১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৫৪ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৮ হাজার ২৭৭ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৬৮ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন মিলে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ২ হাজার ১৪২ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৯১ হাজার ৩২৩ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ২২৭ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৭১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৪৫২ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে ১০ জুলাইয়ে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস মজুদ আছে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৩টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক মজুদ আছে ৬৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৭টি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ১১ লাখ ৪৮ হাজার ২৭১টি এবং গগলস ১৩ লাখ ১০ হাজার ২৮০টি মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮৬টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৫৬৬টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৭২ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় যুক্ত হয়েছেন ৫ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৭২৯ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৪ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ হাজার ৯২৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৪ জন এবং এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩৮২ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৮ হাজার ১০২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ২১ লাখ ২ হাজার ৩২৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৫৬৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৬ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।