নওগাঁ’র ধামইরহাটে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে বাড়ির আঙ্গিনায় মাছ চাষে সফলতা

509

নওগাঁ, ৯ জুলাই, ২০২০ (বাসস): নিজস্ব কোন পুকুর নেই কিংবা নেই কোন উন্মুক্ত জলাশয়। তারপরও মৎস্য বিভাগের পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাড়ির আঙ্গিনায় একটি ট্যাংকি স্থাপন করে মাছের পোনা উৎপদন করে সফলতা অর্জন করেছেন এক শিক্ষিত বেকার যুবক।
নওগাঁ জেলায় ধামইরহাট উপজেলার শংকরপুর গ্রামে বায়োফ্লোক পদ্ধতিতে বাড়ির আঙ্গিনায় মাছের পোনা উৎপাদন করে আশাতীত লাভবান হয়ে এলাকায় ব্যপক সাড়া জাগিয়েছেন শিক্ষিত এ বেকার যুবক মেহেদী হাসান। তাঁর এ সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন। সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছে মৎস্য বিভাগ।
জেলার ধামইরহাট উপজেলায় শংকরপুর গ্রামের মেহেদী হাসান স্থানীয় কলেজ থেকে আই এ পাস করে সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করার কারণে পড়াশুনা আর এগোয়নি। স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশায় নানা পরিকল্পনার জাল বুনেন তিনি। অবশেষে জানতে পারেন নিজের পুকুর বা জলাশয় না থাকলেও মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া সম্বভব। স্থানীয় মৎস্য বিভাগের সাথে পরামর্শ করে পর পর দু’বার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদেরই পরামর্শ অনুযায়ী বাড়ির আঙ্গিনায় চারিদিকে আড়াআড়ি ২৩ ফুট মাপের একটি ট্যাংক নির্মাণ করেন। ট্যাংকির গেড়াসহ পুরোটা মোটা পলিথিন পেপার দিয়ে আবৃত করা হয়। এ ট্যাংকিতে পানি ভরে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে বেশ কয়েকটি অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে ৫শ টাকা মূুল্যের বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছের রেণু ছাড়েন। দু’মাস ধরে এদের খাবার, অক্সিজেন তৈরির জন্য বিদ্যুৎসহ অন্যান্য আরও প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মাত্র দু’মাসে এ পোনা বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। তবে মেহেদী হাসান জানান ,এ বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কার্পজাতীয় মাছের চেয়ে শিং ও মাগুর জাতীয় রেণু ছেড়ে পোনা উৎপাদন করা অধিক লাভজনক। সে ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকার শিং বা মাগুড় মাছের রেণু ছেড়ে পোনা আকারে বিক্রি করলে অধিক লাভজনক হবে। শিং ও মাগুড় মাছের পোনা উৎপাদন করলে প্রতি দুই মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে নীট ৫০ হাজার টাকা লাভ করার প্রত্যাশা তার। এ হিসেবে বছরে পর্যায়ক্রমে ৩ বার পোনা উৎপাদন করা সম্ভব। তাহলে এ বায়োফ্লক ট্যাংকি থেকে এক বছরে কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
স্থানীয় উদ্যোমী আরেক যুবক জাহিদ হাসান এ প্রকল্প দেখতে এসে জানান বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের পোনা চাষের এ সফলতা দেখতে এলাকার অনেক মানুষ প্রতিদিন মেহেদী হাসানের এ প্রকল্প দেখতে ভিড় করছেন। তাঁর এ সফলতা দেখে তিনি নিজেও এমন প্রকল্প স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় মৎস্যচাষী তোফাজ্জল হোসেন বলেছেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে পুকুরে মাছ চাষ করে আসছি। আমার কাছে বায়োফ্লক পদ্ধতি একটি নতুন ধারণা। আমি খুব কাছে থেকে মেহেদী হাসানের এ প্রকল্প দেখেছি। একেবারে বাড়ির আঙ্গিনায় ট্যাংকি করে মাছের পোনা উৎপাদন করা যায় এমন ভাবনা ছিলনা। এখন বাস্তবে এটা দেখে আমি অভিভুত হয়েছি। এটি অবশ্যই লাভজনক।
ধামইরহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিসের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জানিয়েছেন মৎস্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বায়েংাফ্লক একটি নতুন অথচ বৈজ্ঞানিক ধারণা। যাদের কোন পুকুর নেই এমন জমিও নেই সেসব বেকার যুবক নিজেদের বাড়ির আঙ্গিনায় এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে একদিকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন অন্যদিকে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা করতে পারেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগ সব ধরণের সহযোগিতা দিতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।