মৃণাল ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া

449

চট্টগ্রাম, ৮ জুলাই ২০২০ (বাসস) : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মৃণাল ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে বুধবার ভোর রাত ৩ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরেণ্য এই শিল্পীর জীবনাবসান হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি এক ছেলে ও স্ত্রী রেখে গেছেন। তার আরেক ছেলে আগেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
মুক্তিযোদ্ধা মৃণাল ভট্টাচার্য একাধারে সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনের অভিভাবক হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।
তার ছেলে সঞ্জীব ভট্টাচার্য জানান, “ বাবা ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতা নিয়ে ১৮ জুন নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনার সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। বুধবার ভোররাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর জেএম সেন হলে বাবাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। দুপুরের পর সীতাকুন্ডের মহাদেবপুর এলাকায় তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।”
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার মহাদেপুর এলাকার সন্তন মৃণাল ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠসৈনিক হিসেবে অংশ নেন। তিনি নজরুল শিল্পী সংস্থা, চট্টগ্রামের সভাপতি এবং আর্য্য সংগীত বিদ্যাপীঠের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠসৈনিক সুজিত রায় বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মৃনাল ভট্টাচার্যের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তেস্মরণ করবে । মৃনাল ভট্টাচার্য ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল এবং মিশুক প্রকৃতির একজন অসাধারণ মানুষ। খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যেতে পারতেন। ছোটদের স্নেহ এবং বড়দের সম্মান ছিল তাঁর কাছে প্রথম এবং প্রধান বিষয়।
সংস্কৃতি কর্মী আবছার উদ্দিন অলি বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় জন্ম নেয়া এই বরেণ্য সংগীত শিল্পী আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি সম্পদ ছিল, যাকে আমরা হারিয়ে বুঝলাম তিনি কত বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ ময়দানে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম বীর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় সক্রিয় অংশগ্রহন করেন এবং সংগীত পরিবেশন করেন।
মৃনাল ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদ চট্টগ্রাম, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, নজরুল শিল্পী সংস্থা, চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক মিডিয়া ঐক্যজোট, চট্টগ্রামের সর্বস্তরের শিল্পীবৃন্দ, চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক অঙ্গন, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম (আসাফো), ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মৈত্রী পরিষদ, আজকাল সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, চট্টগ্রামের যন্ত্র শিল্পী সংস্থা, চট্টগ্রাম মঞ্চ সংগীত শিল্পী সংস্থা এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল চট্টগ্রাম জেলা সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জে.এম.সেন হলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানোহয়।