বাজিস-৫ : নওগাঁয় মরু অঞ্চলের ফল সাম্মাম চাষে সাফল্য

130

বাজিস-৫
সাম্মাম-সাফল্য
নওগাঁয় মরু অঞ্চলের ফল সাম্মাম চাষে সাফল্য
নওগাঁ, ৭ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : জেলার আত্রাই উপজেলায় সৌদি ফেরত এক কৃষক মরু অঞ্চলের ফল সাম্মাম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। নতুন জাতের বিদেশী এই সাম্মাম ফল দেখতে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক দর্শনাথী আসছেন। অন্যদিকে অনেকেই এই ফসল চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
নওগাঁ জেলার ভর অঞ্চল বলে খ্যাত আত্রাই উপজেলার মীরাপাড়া গ্রামে সৌদি ফেরত কৃষক রেজাউল ইসলাম তাঁর দেড় বিঘা জমিতে মরুভুমি অধ্যুষিত সৌদি আরবের জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল সাম্মাম চাষ করেছেন। এই ফলটি দেখতে সাদাটে অনেকটা বেল কিংবা বাতাবী লেবুর মত। ভিতরে লাল তরমুজের মত রসালো। সৌদি আরব থাকার সময় রেজাউল ইসলাম সাম্মাম ফল খেয়েছেন। দেশে ফেরার পর থেকে সাম্মাম ফলের চাষ করার আগ্রহ জন্মায় তার মনে। অবশেষে বগুড়াস্থ এগ্রো ওয়ান নামের এক কৃষি গবেষণা খামারে এই সাম্মাম ফলের চারা’র সন্ধান পান। ওই ফার্মটিতে এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করেন রেজাউল ইসলামের ভাতিজা কৃষিবিদ মো. সামিউল ইসলাম। সেই সুবাদে চারার সন্ধান লাভ।
সেখান থেকে টারা এনে প্রাথমিকভাবে নিজস্ব দেড় বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষ করেন। এই দেড় বিঘা জমিতে চাষ দিয়ে তৈরী, চারা ক্রয়, জাংলা তৈরী, কীটনাশক, শ্রমিক ইত্যাদি বাবদ সর্বমোট খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। মাত্র তিন মাসের মধ্যে এই ফসল থেকে ফল উৎপাদন এবং বাজারজাত করা সম্ভব হয়েছে। এই তিনমাসে তিনি কৃষক সব খরচ বাদ দিয়ে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা আয় করেছেন। চারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এগ্রো ওয়ান-এর মাধ্যমে বাজারজাত করাও সহজ হয়েছে। বগুড়া হয়ে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে তিনি এসব বিক্রি করছেন।
রেজাউল ইসলাম জানান এই জমি থেকে মৌসুমে প্রায় ২ হাজার ফল উৎপাদিত হয়েছে। প্রতিটি ফল ২ থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। বিক্রি ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেখতে আসা দর্শনার্থী এবং আত্মীয়-স্বজনদের নুতন ফল হিসেবে এমনি খেতে দিয়েছেন। তারপরও সব খরচ বাদ দিয়ে নিট লাভ করেছেন ৩ লাখ টাকা। মাত্র ৩ মাসে দেড় বিঘা জমি থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করা অন্য কোন ফসল উৎপাদন করে সম্ভব নয়। কাজেই সাম্মাম চাষ অত্যন্ত লাভজনক ফসল। বিদেশী এই নতুন ফল দেখতে, খেতে এবং কিনতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী আসছেন। তারা রেজাউল ইসলামের এই সাফল্যের গল্প শুনে নিজেরাও সাম্মাম চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
একই খরচে সাথী ফসল হিসেবে রেজাউল ইসলাম সাম্মাম চাষের পাশাপাশি পৃথক কয়েকটি জাংলায় করলা এবং ঝিঙে চাষ করেছেন। করলা এবং ঝিঙে বিক্রি করে তিনি অতিরিক্ত আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন।
চারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এগ্রো ওয়ান কৃষি খামারের এক্সিকিউটিভ মো. সামউিল ইসলাম বলেছেন, কৃষকরা প্রথাগত ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এই করেনা পরিস্থিতিতে বিকল্প ফসল হিসেবে কিভাবে কৃষকদের লাভজনক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়, সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সাম্মামের চারা উৎপাদন করে দেশব্যপী এই ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিদেশী অথচ সুস্বাদু এঈ লাভজনক ফল উৎপাদনে তারা কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রবিয়াহ নুর আহম্মেদ বলেছেন বাংলাদেশে বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশের ফুল ও ফসল চাষ করে জনপ্রিয় করে তুলছে কৃষকরা। এতে একদিকে আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে এসব বিদেশী ফল ফসলের স্বাদ ও পুষ্টি গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছে এদেশের মানুষ। আত্রাইয়ের কৃষক রেজাউল ইসলাম মরু অঞ্চলের জনপ্রিয় ফল সাম্মাম চাষ করে সফল হয়েছেন। তিনি বলেন নওগাঁ’র জমিতে মরু ফল সাম্মাম চাষের উজ্জল সম্ভবনা রয়েছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১২১০/কেজিএ