বাজিস-২
নাটোর- করোনা জয়ী ব্যক্তিরা
নাটোরে করোনা জয়ী ব্যক্তিরা আশার আলো জ্বেলেছেন
নাটোর, ৭ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : করোনা সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখতে নাটোরে প্রথম সারিতে কাজ করছেন চিকিৎসক, প্রশাসক আর পুলিশ সদস্যরা। দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে নিজেরাই সংক্রমিত হচ্ছেন। আবার সংক্রমণ থেকে পাচ্ছেন মুক্তি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত এসব ব্যক্তিরা আশার আলো জ্বেলেছেন সাধারণ মানুষের মনে। এসব করোনাযোদ্ধারা সাহস যোগাচ্ছেন অন্যদের।
নাটোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু হাসান করোনা আক্রান্ত হওয়ার পজিটিভ রিপোর্ট পান ১৯ জুন। দুই সপ্তাহ ধরে বাসায় আইসোলেশনে থেকে করোনা থেকে মুক্ত হন তিনি। জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর দপ্তরে প্রশাসনের করোনা জয়ী এ কর্মকর্তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরআগে রোববার দুপুরে উপজেলা পরিষদের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের এক অনুষ্ঠানে করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আবার নতুন উদ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ শুরু করতে চাই। নাটোরে সাধারণ মানুষকে করোনাকালীন সময়ের স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রমে প্রথম সারিতে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট আবু হাসান বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণকালীন বাসাতে থেকে পড়াশুনা করেছি। বিশেষ করে ধর্মগ্রন্থ পড়ার সুযোগ হয়েছে ব্যাপকভাবে। তবে কাছে আসতে না পারা ছোট্ট বাচ্চাদের মুখগুলো মানসিক কষ্ট দিয়েছে। নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শফিকুল ইসলাম শিমুল তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধিত করেন।
সম্প্রতি করোনাজয়ী জেলা পুলিশের ২৩ সদস্যকে সংবর্ধনা দেয় নাটোর জেলা পুলিশ। নাটোর পুলিশ লাইন্সের ড্রিল শেডে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে করোনা জয়ী ২৩ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ইন্সপেক্টর তৌহিদুল ইসলাম, কনস্টেবল সাজ্জাদ হোসেন এবং কনস্টেবল এলিজা খাতুন তাদের বক্তব্যে করোনাকালীন সময়ে আইসোলেশনে থাকা প্রায় এক মাসের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে আমরা ফিরে এসেছি। আইসোলেশন সেন্টারে জেলা পুলিশের খাদ্য, চিকিৎসা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখাসহ সার্বক্ষণিক সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে যাওয়া এবং মনোবলকে সতেজ রেখে মহান ¯্রষ্টার কৃপায় আমরা করোনা জয়ে সক্ষম হয়েছি।
করোনাজয়ী নাটোর জেলা পুলিশের এক ইন্সপেক্টর, চার সাব-ইন্সপেক্টর, তিন এসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর, ১৩ কনোস্টেবলসহ ২১ জন এবং ইন্ড্রাশট্রিয়াল পুলিশের এক সদস্য ও থানায় কর্মরত বিশেষ আনসারের এক সদস্যকে অনুষ্ঠানে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান শেষে মিষ্টিমুখ করানো হয়।
করোনা যুদ্ধে কাজ করতে যেয়ে আক্রান্ত হয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের ছয়জন চিকিৎসকসহ মোট ১৯ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন পাঁচজন। নাটোর সদর হাসপাতালের হাড়-জোড় বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাঃ তৈমুর আলমের সুস্থতায় গত রোববার দো’য়া মাহফিলের আয়োজন করে স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিক। মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় আবার নিয়োজিত হবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ডাঃ তৈমুর।
নাটোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন জেলা তথ্য অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান। তাঁর সুস্থতার ব্যাপারে আশাবাদী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আনছারুল হক। সুস্থ হতে আল্লাহ্র দয়া কামনা করে তথ্য অফিসার বললেন, করোনা সংক্রমণ তথ্য সব সময় পরিবর্তন হচ্ছে। সুস্থ হতে পারলে ফিরে গিয়ে ঐসব তথ্য দিয়ে আবারো জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাই।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, মানুষের কল্যাণে জীবন বাজি রেখে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যকর সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। আমাদের সার্বক্ষণিক সাহস ও সমর্থন প্রদান এবং নিজেদের মনোবল চাঙ্গা থাকায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা সুস্থ হয়ে ফিরে আসছেন এবং তাঁরা সকলেই আবার দেশের কল্যাণে ও মানুষকে নিরাপদ রাখতে কাজ শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত জেলা পুলিশের ৩৮ জন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৮জন সুস্থ্য, অন্যরা সুস্থতার পথে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে ফিরে আসায় আমাদের মনোবল বাড়ছে। সংক্রমণ পরিস্থিতিতে তাদের ফিরে আসা এবং আবারো মানুষের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষের মনে আশার আলো জ্বেলেছে। তারা সংক্রমণ মোকাবেলায় মানসিকভাবে সাহসী হয়ে উঠছেন।
বাসস/সংবাদদাতা/১১২৫/নূসী