চট্টগ্রামে করোনায় থমকে যাওয়া শিক্ষাঙ্গন অনলাইনে সচল

542

চট্টগ্রাম, ৬ জুলাই ,২০২০ (বাসস) : চট্রগ্রামে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণে থমকে যাওয়া শিক্ষাঙ্গন আবার সচল হতে শুরু করেছে। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে আছে।
নগরীর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউর) ২০২০ সামার সেমিস্টারের ক্লাস গত ৫ জুলাই শুরু হয়েছে। সিআইইউর নিজস্ব সফটওয়ার কোর্স ম্যানেজমেন্ট এন্ড অপারেশন সিস্টেম (সিমস) ও গুগল মিটের মাধ্যমে নতুন সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস নিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। তরুণ শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিজ্ঞ ও প্রবীণ শিক্ষকরাও ক্লাস নিয়েছেন উৎসাহের সঙ্গে।
এদের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও সিআইইউ’র স্কুল অব লিবারেল আর্টস এন্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার আগ্রহ দেখে খুবই ভালো লাগছে। আশা করছি, তারা এই আগ্রহ ধরে রেখে নিজেদের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে যাবেন।
২০২০ সামার সেমিস্টারে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। পুরোনোদের সাথে অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পেরে উচ্ছাস প্রকাশ করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা এবং প্রথম দিনেই অনলাইনে ক্লাস বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে বলে আলাপকালে জানান তারা। সিআইইউতে বর্তমানে বিজনেস স্কুল, স্কুল অব সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, স্কুল অব লিবারেল আর্টস এন্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস ও স্কুল অব ল প্রোগ্রামের অধীনে রয়েছে একাধিক সাবজেক্ট।
সিআইইউ উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহফুজুল হক চৌধুরী বাসসকে বলেন,‘করোনা সংকটের কারণে আমরা একটু থমকে গিয়েছিলাম। এখন নতুন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রথম দিনেই যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আশা করি, আমাদের আর থামতে হবে না। ইউজিসির নির্দেশনা অনুসরণে আমরা পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবো।’
করোনা সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আমরা কোর্সের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল নীতি নিয়েছি। তবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু করা হবে না যাতে কোনো শিক্ষার্থী সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়েন। ছাত্র জমায়েত না ঘটিয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নতুন সফটওয়্যারে আমরা পরীক্ষাসহ সকল শিক্ষাক্রম নির্বিঘেœ চালাতে পারবো।’
নগরীর অপর বিদ্যাপীঠ ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ)করোনার কারণে একদিনের জন্যও তাদের শিক্ষাক্রম বন্ধ করেনি।
ইডিইউ’র ডিন অব বিজনেস ফ্যাকাল্টি ড. মো. রকিবুল কবির বাসসকে বলেন, ‘আমরা করোনাকালের আগে অনলাইনে মাঝেমাঝে ডেমো ক্লাস নিয়েছি। তাই শুরু থেকেই আমরা বিপাকে পড়িনি, অনলাইনে ক্লাস কন্টিনিউ করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন (ইউজিসি) আমাদের দু’টি অপশন দিয়েছে। পরীক্ষা গ্রহণসহ সেশন চালু রাখতে আমরা ‘টার্ন ইট ইন’ সফটওয়্যার চালু করেছি। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ রকম সফটওয়্যার চালু আছে। এতে পরীক্ষায় কোনো স্টুডেন্ট কপি করতে পারবে না। সিমিলার হলেই আটকে যাবে। প্রত্যেক স্টুডেন্টের কাছে এ সফটওয়্যারের একাউন্ট আছে। এছাড়া, আমরা মাঝেমাঝে প্রেজেন্টেশনও নিচ্ছি।’
নগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতেও অনলাইনে ক্লাস চলছে। করোনা মহামারির কারণে ১৮ মার্চ থেকে ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা ক্যাম্পাস খুলে শিশক্ষার্থীদের ঝুঁকির মুখে ফেলার পক্ষে নন। তবে, অনলাইন ক্লাস চালু থাকবে এবং অভ্যন্তরীণ সকল কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
সাদার্ন ইউনিভার্সিটিরউপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নুরুল মোস্তফা অনলাইনে নিয়মিত ক্লাসে যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস চালিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ক্ষতি পুষিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। আশা করছি, সেশনকে আরো কার্যকরভাবে এগিয়ে নেয়ার জন্য আগামীতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
বাংলাদেশে মহিলা সমিতি (বাওয়া) স্কুল এন্ড কলেজে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত মে মাসে। ধাপে ধাপে তারা এখন দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস অনলাইনে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বাওয়া স্কুলের প্রাতঃ বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া বেগম বাসসকে জানান, অনলাইনে গড়ে প্রতিদিন ৩টি ক্লাস নেয়া হয়। ঈদুল আজহার আগে ও পরে দুই ধাপে সব ক্লাসের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া, নগরীর প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, ইংরেজি মাধ্যমের সব স্কুল এবং অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলে অনলাইনে ক্লাস চলছে বলে জানা গেছে।