বাজিস-২ : শেরপুরের ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস পালিত

129

বাজিস-২
শেরপুর- কাটাখালি যুদ্ধ
শেরপুরের ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস পালিত
শেরপুর,৬ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : আজ ঐতিহাসিক কাটখিালি যুদ্ধ দিবস। এ উপলক্ষে সকাল ১১টায় কাটাখালী ব্রিজে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে শেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তোফায়েল আহমেদ, এসডিসি মিজানুর রহমান, ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদসহ জনউদ্যোগ, প্রজন্ম ৭১-সহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
১৯৭১ সনের এইদিনে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাটাখালি ব্রিজে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ৩ মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২ জন শহীদ হন। শহীদ হন একই পরিবারের ৩ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজমূল আহসান, মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেন।
স্বাধীনতার পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন কাটাখালি’ ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে। এছাড়া স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও চেতনা ভাস্বর করে রাখার জন্য স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পর হলেও পুরোনো সেই সেতুটি সংরক্ষণে ইতোমধ্যে সংস্কার কাজসহ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। সেইসাথে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি কাটাখালি ব্রিজ অঙ্গনে স্বাধীনতা উদ্যান প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৭১-এর ৫ জুলাই রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কোম্পানী কমান্ডার নাজমূলের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট ফিট করে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কাটাখালি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। সফল অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী রাঙ্গামাটি গ্রামে আশ্রয় নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। দিনের আলো ফুটে ওঠায় কোথাও বের হওয়া নিরাপদ মনে না করে পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারাও সেখানেই ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু ওই গ্রামের দালাল জালাল মিস্ত্রী পাক বাহিনীর স্থানীয় হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবরটি পৌঁছে দেয়। সংবাদ পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ৬ জুলাই সকালে রাজাকার, আল-বদরদের সাথে নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রাম তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। কোম্পানী কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দেয়। শুরু হয় সন্মুখ যুদ্ধ। পাক বাহিনী অবিরাম গুলি বর্ষণ শুরু করে। ওই গ্রামের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাওয়ার একমাত্র পথ খোলা ছিল রাঙ্গামাটি বিলের দিকে। বিলটিও পানিতে তখন টইটুম্বুর ছিল। এমন অবস্থায় ওই বিলের পানিতে নেমে কভারিং ফায়ার করতে করতে কোম্পানী কমান্ডার নাজমুল আহসান মুক্তিযোদ্ধাদের রাঙ্গামাটি বিলের পানি সাঁতরিয়ে চলে যাবার পথ তৈরী করে দেন। সকলে চলে যাওয়ার পর হঠাৎ পাকিদের ব্রাশ ফায়ারে কমান্ডার নাজমুলের বুক ঝাঁঝড়া হয়ে যায়। কমান্ডার নাজমুলের লাশ আনতে গিয়ে তার চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনও শহীদ হন পাকিদের গুলিতে। এদিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রাঙ্গামাটি বিলের পানি রাঙ্গা হয়ে উঠেছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে পাক বাহিনী রাঙ্গামাটি গ্রামে হানা দিয়ে খুঁজে খুজেঁ বের করে ৬০/৭০ জন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন শহীদ হন। এদের মধ্যে একজন গুলি খেয়েও মৃতের মতো পড়ে থাকেন। মৃত ভেবে পাক বাহিনী তাকে ফেলে চলে যায়। পায়ে বিদ্ধ গুলি নিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সেদিনের বিভীষিকা নিয়ে আজও বেঁচে আছেন রাঙ্গামাটি গ্রামের ইউনুছ আলী। এছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় হানাদার বাহিনী। শহীদ পরিবারের সদস্যরা বুকফাটা কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছেন। ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের ৩ নারীকে সরকার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলোর কোন স্বীকৃতি মেলেনি। গ্রামবাসীদের প্রত্যাশা, তাদের স্বীকৃতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা হোক।
বাসস/সংবাদদাতা/১২৪৫/নূসী