২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা

1172

ঢাকা, ১ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনা শনাক্তের ১১৬তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে সুস্থতাও।
গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪১ জন। গতকালের চেয়ে আজ ২৩ জন কম মারা গেছেন। গতকাল রেকর্ড সংখ্যক ৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৮৮৮ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ দশমিক ০১ শতাংশ কম।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৬৪০ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৮৪৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৬২ হাজার ১০২ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় ১৭ হাজার ৮৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৭৭৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৯৩ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৮ হাজার ৪২৬টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৬৮২ জন। দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৯৮টি । আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৮৬৩টি। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৯৭১টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৬৯টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৭ হাজার ৮৭৫টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৮ হাজার ৪২৬টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৫৫১টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৩৩৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ১শ’ বছরের ১ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ জন রয়েছেন। এখন পর্যন্ত মোট মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬০ ঊর্ধ্ব ৪৩ দশমিক ২৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং ১০ বছরের নিচে দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ৫ জন, সিলেটে ২ জন এবং রংপুর বিভাগে ১ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ২৩ জন এবং বাসায় ১৮ জন মারা গেছেন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৭৫টি, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১৩৯টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৪৮টি, আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৮১টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১১ হাজার ১৪৪টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ২০৪টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৯৮টি। সারাদেশে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮৭৩ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২১৬ জন এবং ২৪ ঘন্টায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৮৩৮ জন, ছাড় পেয়েছেন ৪৯৭ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৯৫৫ জনকে। বর্তমানে মোট আইসোলেশনে আছেন ১৫ হাজার ৫৪৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ৫৫৫ জন এবং এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৯৯৫ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ২৭ হাজার ৫৪২ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৪২৯ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৫ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪১৪ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২ হাজার ৪১৩ জন ছাড় পেয়েছেন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৮৮২ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৭শ’টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪টি। বর্তমানে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৮১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯০টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ২ হাজার ৬৮১টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪১৪ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৪ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৩০১ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৬ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩০ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ১১৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৯৩১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫১৫ জন এবং এ পর্যন্ত ২১ হাজার ৫৯৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩০ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৬৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৯৪৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩ হাজার ৮৬২ জন বলে তিনি জানান। বুলেটিন উপস্থাপনের শুরুতে অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশের অনেক এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা শুরু হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেষ্ট এবং কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরও কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় খাবারসহ সব ধরনের স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং অন্যান্য ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বন্যায় সাপের দংশন ও পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। যাতে সাপে কেটে কিংবা পানিতে ডুবে কোনো অপমৃত্যু না হয়। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানানো হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকায়। পরিবারের কোনো সদস্যের জ্বর, কাশি থাকলে তিনিসহ সকলে মাস্ক পরবেন এবং যথাসম্ভব আলাদা থাকবেন। টেলিফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।