২৪ ঘন্টায় করোনায় ৩৪ জন মারা গেছেন, নতুন আক্রান্ত ৩,৫০৪

667

ঢাকা, ২৭ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনা শনাক্তের ১১২তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
গতকালের চেয়ে আজ ৬ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪০ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৬৯৫ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজার ১৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫০৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৩৬৪ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৮ হাজার ৪৯৮টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৮৬৮ জন। দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জন।
নমুনা পরীক্ষায় ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ২ দশমিক শূন্য ২১ শতাংশ বেশি। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১৮৫ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৪৫৩ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৬৩৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৪ হাজার ৩১৮ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ কম।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৯টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ২৭৫টি। গতকালের চেয়ে আজ ৩ হাজার ২১৬টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৫৮টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ হাজার ১৫৭টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৮ হাজার ৪৯৮টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩ হাজার ৩৪১টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭ লাখ ১২ হাজার ৯৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। অঞ্চল বিবেচনায় এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন, সিলেট বিভাগে ৪ জন এবং রংপুর বিভাগে ২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩০ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭২৬ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৪ হাজার ২৬৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৫৯ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ৯ হাজার ৮২৬ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৩ জনকে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৩১২ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬৭ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৫২০ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ১৫৭ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৯১৩ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪টি। বর্তমানে ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৮১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৯টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৪টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪০৩ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৮৮৫ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৩২ হাজার ১৮০ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৬ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৮৮৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৯২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৯৫ জন এবং এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৬৫১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৬ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ১২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯৪ লাখ ৭৩ হাজার ২১৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ১১৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৯ জন বলে তিনি জানান।
বুলেটিন উপস্থাপনের শুরুতে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের নেতৃত্বে জোনিং পদ্ধতি নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি অব্যাহতভাবে কাজ করছে। রেড জোন, ইয়েলো জোন বা গ্রিন জোন নির্ধারণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি নির্ধারণ হয় সংক্রমণ বিস্তারের সর্বাধিক ঝুঁকি, মাঝারি ঝুঁকি ও কম ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, ‘জোনিং পদ্ধতি স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। কাজেই স্থায়ীভাবে কোনো অঞ্চল বা এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা বা বাতিল করা হয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু এলাকায় রেড জোন বাস্তবায়ন হচ্ছে।’
তিনি জানান, ঢাকা মহানগরীর ওয়ারীর নির্ধারিত এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে পরীক্ষামূলক রেড জোন বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। পূর্ব রাজাবাজারে রেড জোন চলমান আছে পরামর্শক কমিটির গাইডলাইন অনুসারে। স্থানীয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে যেখানে যেমন তেমনভাবেই প্রয়োজনে রেড জোন বাস্তবায়নের কাজ চলমান।
নাসিমা সুলতানা জানান, জোন বিষয়ক কমিটিতে ১৩ জন সদস্য আছেন এবং এর সভাপতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি-বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।