বাজেট উন্নয়ন ও জনমুখী : কৃষিমন্ত্রী

365

ঢাকা, ২৩ জুন, ২০২০ (বাসস) : কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রস্তাবিত বাজেটকে জনমুখী ও উন্নয়নমুখী উল্লেখ করে বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে দেয়া সবকটি বাজেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘোষিত দিন বদলের সনদ তথা রূপকল্প অনুযায়ি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটও একই ধারাবাহিকতায় সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তিনি আজ সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সরকারের গত ১২টি বাজেট বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবারের বাজেটেও তার প্রতিফলন ঘটেছে।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা গ্রহণের বছর থেকেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও সবক্ষত্রে উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে। করোনার এ সময়েও দেশে খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই। উৎপাদনও ঠিক রয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এখন সরকার এসডিজি বাস্তবায়ন করছে।
ড. রাজ্জাক বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমনে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এক সময়ে নিশ্চয়্ই বিশ্ব এর প্রভাবমুক্ত হবে। আর বাজেট ব্যবস্থাপনায় সরকারের দক্ষতায় প্রতিকুলতা সফলভাবে মোকাবেলা করে প্রস্তাবিত ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হবে না।
তিনি বাজেট ঘাটতি সংস্থানের ব্যবস্থা সম্পর্কে বিরোধী দল ও বিভিন্ন মহলের সমালোচনার জবাবে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৮৪ হাজার কোটি টাকা দেশীয় ব্যাংক এবং ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে ঘাটতি সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহে তারল্যে সংকট বা অন্য কোন সমস্যা হবে না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়ের সাহসী ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, অতীতে শত সমালোচনা আর প্রতিকুলতার মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেয়া সব বাজেট ধারাবাহিকভাবে শতকরা ৯৭-৯৮ ভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এ সাফল্য অর্জন করার সক্ষমতা প্রমান করে এবারের বাজেটও বাস্তবায়ন অবশ্যই সম্ভব হবে।
আলোচনার শুরুতে তিনি আজ ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু একটি দল নয়, একটি সৃষ্টিশীল স্ফুলিংয়ের নাম। বাঙালি জাতি ও রাষ্ট্রের অনেক গৌরবজনক অর্জন এ দলটির নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভ। স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় দেয়া হয়েছিল। ঘৃন্য ঘাতকরা তাঁকে হত্যা না করলে স্বাধীনতা লাভের ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আজকের মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর চেয়ে উন্নত অর্থনীতির দেশে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধুর আমলে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৪ ভাগ, যা এর পরের ৪০ বছরেও অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, অন্যদিকে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, দারিদ্র্য হার ৪১ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশে এবং অতিদারিদ্র হার ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বিএনপির হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, বর্তমান সরকারের উচ্চাভিলাস আছে বলেই সরকারের অতীতের সব বাজেট সফল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আর এ সাফল্যের মধ্য দিয়ে আর্থ-সমাজিক সব ক্ষেত্রে বড় বড় অর্জন সম্ভব হয়েছে। উচ্চাবিলাস ছিল বলেই মাথাপিছু আয় ৬শ’ ডলার থেকে ২ হাজার ৯ ডলারে উন্নীত ও গত বছরের তুলনায় সাড়ে ৬ গুণ বেশী বাজেট প্রদান সম্ভব হয়েছে। আর প্রস্তাবিত বাজেটে এবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে প্রথম বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতার মতো অনগ্রসর জনগণের জন্য ভাতা বা আর্থিক সহায়তার নিয়ম চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের বছর এ সব খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৮৮ হাজার, এবার তা বাড়িয়ে ১ কোটির বেশি করা হয়েছে।
কোভিড- ১৯ মোকাবেলার বিষয়ে বিএনপির হারুনুর রশীদের বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সম্পদ ও সামর্থের সীমাবদ্ধতা সত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকার করোনা মোকাবেলায় সবকিছু করছে। যার ফলে মৃত্যু হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত দেশসমূহ থেকে অনেক নিচে রয়েছে। এমনকি প্রতিবেশি ভারত, পাকিস্তানের তুলনায় মৃত্যু হার কম রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে তিনি জানান, করোনায় চীনে মৃত্যু হার ৫.৫ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৫.১৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৩.৯৭ শতাংশ, বেলজিয়ামে ১৫ শতাংশ, জার্মানিতে ৪.৬৬ শতাংশ, ভারতে ৩.১৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২.০০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এ হার ১.২৯ শতাংশ।
বাজেট আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সরকারি দলের মির্জা আজম, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম মিলন, উম্মে কুলসুম স্মৃতি, জাসদের হাসানুল হক ইনু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা অংশগ্রহণ করেন।