নীলফামারীতে জমির উর্বরা শক্তি ফেরাতে তিল চাষে সরব কৃষক

478

নীলফামারী, ১৬, জুন, ২০২০ (বাসস) : কৃষি থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া তিল চাষে এখন সরব জেলার কৃষক। অন্য ফসলের মাঝামাঝি সময়ে ফেলে রাখা জমিতে তিল চাষ করে বাড়তি আয় করছেন তারা।
কৃষকরা বলছেন, ফসলের আচ্ছাদনে মাটির রস ও জৈব পদার্থ সংরক্ষিত থাকায় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এতে কম খরচে পরবর্তী ফসলের উৎপাদন বেশী হয়।
খাবার তেল হিসেবে তিলের তেল বেশি স্বাস্থ্যকর। তিলের নাড়–, খাজা জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার। প্রসাধনী শিল্পেও তিলের চাহিদা প্রচুর। পাশপাশি তিলের রয়েছে পুষ্টি এবং ওষুধী গুণ। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার ভিড়ে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে তিল। বহুগুণের অধিকারী ওই ফসলটির পুরনো ঐতিহ্য ফেরাতে নিজ উদ্যোগে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন এসব কৃষক।
জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নে বিভন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে মাঠভরা তিলের ক্ষেত। ফসলের পরিচর্যায় সরব এসব গ্রামের কৃষক। তাদের মতে, রাসায়নিক সারের ব্যবহারে হারিয়ে গেছে জমির উর্বরা শক্তি। তাই উর্বরতা শক্তি ফিরিয়ে আনতে তারা নেমেছেন তিল চাষে। আর এ ফসলে যতœআত্তি, সার, সেচ তেমন কিছুই লাগেনা।
ইউনিয়নের দুবাছরি গ্রামের কৃষক মোতালেব উদ্দিন তালুকদার (৬০) এবার তিল আবাদ করেছেন দুই বিঘা জমিতে। অনেকে তিল চাষ ছেড়ে দিলেও তিনি সেটি ধরে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার দেখাদেখি ওই গ্রামে বেড়েছে তিলের আবাদ। ওই কৃষক বলেন,“তিল চাষ করলে জমির উর্বরা শক্তি বাড়ে। রায়সনিক সার ও জমি নিরানীর প্রয়েজন হয়না। কম পরিশ্রম এবং স্বল্প খরচে প্রতি বিঘায় পাঁচ থেকে ছয় মণ ফলন পাওয়া যায়। এক বিঘা জমির ফসল বিক্রি করে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করা যায়”।
একই গ্রামের অপর কৃষক আশরাফুল ইসলাম গত তিন বছর ধরে তিলের আবাদ করছেন এক বিঘা জমিতে। তিনি বলেন,“এ তিন বছরে আমার জমির উর্বরা শক্তি বেড়েছে। তিল চাষের পর অন্য ফসলের আবাদ ভালো হচ্ছে”।
তিনি জানান, তিল গাছের পাতা পড়ে জমির উর্বরা শক্তি অনেক বাড়ে। ফলে পরবর্তী আমন মৌশুমে রাসায়নিক সার ব্যাবহার না করেই ভাল ফসল পাওয়া যায়।
কৃষক রহমতুল্লাহ (৫৫) জানান, আলু চাষের পর চৈত্র মাসে তিল চাষ করেন এলাকার কৃষকরা। আলুর জমিতে তেমন চাষের প্রয়োজন হয়না। জমি সমান করে তিলের বীজ ছিটালেই চলে। প্রতি বিঘায় প্রয়োজন এক কেজি বীজ। যার বাজার মূল্য ১০০ টাকা। সেচ, সার, নিরাণী ছাড়াই তিন মাসের মধ্যে ফসল উঠে। কোন রোগবালাই না থাকায় কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয়না। এরপর ওই জমিতে আগাম আমন আবাদের পর আলুর আবাদ করেন তারা।
তারা জানান, তিল বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থ পরিবারে কিছুটা ব্যয় নির্বাহের পর আমন আবাদের কাজে লাগে। আমন আবাদের পর আলু আবাদ পুরোটাই লাভের মধ্যে থাকে। তিল আবাদের ফলে ঋণ কর্জ থেকে মুক্ত হয়েছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসার দপ্তর সূত্র জানায়, আধুনিক কৃষি বিকেন্দ্রীকরণের ভিড়ে ক্রমাগত হারিয়ে যাচ্ছে তেল জাতীয় ফসল তিলের চাষ। তবে রোগবালাই কম হওয়ায় তিল চাষ লাভজনক। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি আলু উঠানোর পর আমন আবাদের আগ পর্যন্ত তিন মাস জেলার উঁচু জমিগুলো পড়ে থাকে। কৃষরা ও ফাঁকা সময়টাতে এসব জমিতে তিল চাষে ঝুুঁকে পড়েছেন।
সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস.এম রাকিব আবেদীন হিরু বলেন, “পাঁচ বছর আগে স্বল্প পরিসরে এলাকার কৃষক তিল চাষ শুরু করলেও এখন এর সংখ্যা বেড়েছে। লাভজনক হওয়ায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। তিলের চাষ একদিকে যেমন চাষীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাচ্ছে, তেমনি জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে কাজ করছে”।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান ম-ল বলেন, “এ জেলার মাটিতে পাঁচ ভাগ জৈব পদার্থ থাকার কথা থাকলেও তা একভাগেরও কম রয়েছে। তিল চাষ মাটির জৈব ঘাটতি পূরণে বড় ভূমিকা রাখছে। এ অঞ্চলে তিল চাষের প্রচলন মাটি ও কৃষকের জন্য অত্যন্ত শুভ খবর”।
তিনি জানান, জেলায় এবার সাত হেক্টর জমিতে তিল উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত মেট্রিকটন। সারাদেশে এবার খরিপ মৌসুমে তিল উৎপদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার মেট্রিকটন।