বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে প্রচারণায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে

1809

ঢাকা, ৩ জুন, ২০২০ (বাসস) : বাল্যবিবাহ একটি অপরাধ। সরকার বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সমগ্র দেশে বাল্যবিবাহে হার অনেক কমে আসলেও, শহরের বস্তিগুলোতে বাল্যবিবাহের হার এখনো তুলনামূলক বেশি।
নারী অধিকার কর্মীরা মনে করেন, ‘বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বাল্যবিবাহ অনেক কমেছে সত্যি। তবে এখনো সেটা সর্বত্র একই হারে নয়। এটা কেবল সরকারের একার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা আনা। বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে আরো বেশি প্রচারণা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোকে এ জন্য বস্তিগুলোতে আরো বেশি প্রচারণা চালানো দরকার।
গবেষণা তথ্য মতে, নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মা-বাবারা কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দেন আইন না মেনেই। ঢাকার ভাসানটেক ও চট্টগ্রামের একটি বস্তিতে থাকা কিশোরী ও অল্প বয়সী নারীদের ওপর এই গবেষণা করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস বি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। গবেষকরা বলেছেন, শহরের বস্তিগুলোতে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা নিয়মিত ঘটনা।
গবেষণার ফল উপস্থাপনার সময় জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন সাবিনা ফয়েজ রশিদ বলেন, বস্তিতে এক সঙ্গে অনেক মানুষ বাস করে, তবে তাদের অনেকেই একে অপরের প্রতিবেশি নয়। গ্রামের কিশোরীরা আত্মীয় পরিবেষ্টিত পরিবেশের মধ্যে থাকে। সেই পরিবেশ বস্তিতে নেই বলে সেখানে ঝুঁকি অনেক বেশি।
১৩ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২ হাজার ১৩৬ জন কিশোরী ও অল্প বয়সী নারীর ওপড় এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষনার তথ্য অনুযায়ী বস্তির বিবাহিত নারীর গড় বয়স ১৬ বছর।
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ অনুযায়ী ১৮ বছরের নীচে কোন মেয়ে এবং ২১ বছরের নীচে কোন ছেলের বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অপ্রাাপ্ত বয়স্ক বা ১৮ বছরের কম বয়সী কোন মেয়ের ‘সর্বোত্তম স্বার্থ’ বিবেচনায় আদালতের নির্দেশে বিবাহ হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়না। আইনের এই বিধান বাল্যবিবাহ বন্ধ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।
জাতি সংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে বাল্যবিবাহের হারে বাংলাদেশ চতুর্থ। দেশে বাল্যবিবাহের হার ৫৯ শতাংশ। তবে সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৪৭ শতাংশ।
বস্তির বিবাহিত নারীদের ৩২ শতাংশ গবেষকদের বলেছে মা-বাবারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই দু:শ্চিন্তা করতেন। তাই তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে ২০ শতাংশ বলেছে, ভালবেসে অল্প বয়সে তারা বিয়ে করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে বস্তির ৩৮ শতাংশ কিশোরীর বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের এশিয়া অঞ্চলের সুশাসন ও ন্যায়বিচার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মসুচি বিশেষজ্ঞ নাভস্মরণ সিং বলেন, বাল্যবিবাহ মানবাধিকার লংঘন, শিশু অধিকার লংঘন, আন্তর্জাতিক সনদের লংঘন। অনেক দেশে এটি ফৌজদারী অপরাধ। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ বাকি জীবনের সব আনন্দ নষ্ট করে দেয়। ব্যক্তিগত জীবন একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।
আরেক নারী অধিকার কর্মী কেয়া খানম বলেন,‘বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে বাল্যবিবাহ অনেক কমেছে সত্যি। তবে এখনো সেটা সর্বত্র একই হারে নয়। এটা কেবল সরকারের একার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা আনা। বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে আরো বেশি প্রচারণা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোকে এ জন্য বস্তিগুলোতে আরো বেশি প্রচারণা চালানো দরকার।’