জীবন-জীবিকা দুটো বাঁচাতেই লকডাউন তোলা-আওয়ামী লীগের ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা

498

ঢাকা, ৩১ মে, ২০২০ (বাসস) : করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে অফিস, দোকান-পাট ও গণপরিবহন চালু নিয়ে সমালোচনার জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, মানুষের জীবন ও জীবিকা দুটোই টিকিয়ে রাখতেই সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
সংকটকালীন সময়ে সরকার ত্রাণ দেওয়ার পরেও যখন মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছেন, সেই সময়ে লকডাউন তুলে দেওয়ার বিকল্প ছিল না, বলেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি।
সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সরকার সীমিত পরিসরে সব কিছু খুলে দেওয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের যে ঝুঁকি তৈরি হবে, তার জন্য স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনেরও ওপর জোর দিয়েছেন তারা সবাই।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে দেখা দেওয়ার পর টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে গণপরিবহনসহ বাইরের সব ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ করে দেয় সরকার। স¤প্রতি ঈদ সামনে রেখে দোকান-পাট খোলার পর রোববার থেকে অফিসও সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে। গণপরিবহন চলবে কাল সোমবার থেকে। এ পরিস্থিতিতে শনিবার রাতে করোনাভাইরাস মহামারী ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা লকডাউন শিথিলের কারন তুলে ধরেন।
আলোচনায় যুক্ত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু।আলোচনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ।
ফরহাদ হোসেন বলেন, সারা বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করতে যাচ্ছে তখন ‘গ্লোবাল ভিলেজের’ অংশ হিসেবে বাংলাদেশকেও ‘সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হত।’
“এ রকম একটি বিষয় যে শুরু হয়েছে সেক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো ইউরোপ, আমেরিকা, জার্মানি, স্পেন, এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলো অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ধাপে ধাপে চালু করে দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেহেতু সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন দেশ নয়, তার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সারা বিশ্বের সাথে, গ্লোবাল ভিলেজের পার্ট কিন্তু বাংলাদেশ। বাংলাদেশকেও কিন্তু এখন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ত্রাণ সহায়তা প্রদান শুরু করলেও জনসাধারণ তার প্রয়োজনের তাগিদেই যখন ঘর থেকে বের হয়ে আসছিলেন, সে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড সচল করতে প্রধানমন্ত্রী সব দিক বিবেচনা করেই লকডাউন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
“এটা সত্য যে যদি এভাবে আমরা ঘরে বসে থাকি তাহলে আমাদের সামনে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সেটি কিন্তু অবশ্যম্ভাবী। গার্মেন্ট শিল্পে অর্ডারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছিল, সেখানে টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগিতার জন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করছে। সব বাস্তবতা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন” বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী । তিনি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বিকল্প কর্মপদ্ধতি বাস্তবায়নে পরামর্শ দেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা স্বল্প সংখ্যক মানুষ গিয়ে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে কাজ শুরু করতে চাই। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অফিসের প্রয়োজনীয় কাজটুকু সেরে নেওয়ার জন্য অফিসের মোট কর্মকর্তার ২০, ২৫ বা ৩০ ভাগ কর্মকর্তাকে অল্টারনেটিভভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
বয়স্ক বা অন্তঃস্বত্তা নারী কর্মীদের ডিজিটাল ও ্র নানা মাধ্যমেও অফিসের জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ মনে করেন, সারা দেশে গণপরিবহন চালু হলে ‘বড় চ্যালেঞ্জ হবে’ মাস্ক ব্যবহার বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিষয়ে যারা অসহযোগিতা করছেন, তারা ছোটখাট অপরাধ করছেন। আগামী ১৫ দিনের ব্যবস্থাপনা (১ জুন থেকে ১৫ জুন) আমাদের অফিস, গণপরিবহনে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। যে যার দায়িত্বের জায়গায় থেকে মানুষকে বোঝাতে হবে। তা না হলে সংক্রমণ বেড়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বিক বিবেচনায় জীবন এবং জীবিকার দুটো পথই খুলে দিয়েছেন। কারণ আমরা দেখেছি, লাখ লাখ মানুষ জীবিকার জন্য কর্মে যোগ দিতে চলে আসে তখন তাদের সুযোগ দিতে হবে। এতে বাধা দিলে উন্নয়নশীল একটি দেশ মুখ থুবড়ে পড়বে।”
এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ কাজ করতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, “জীবন ও জীবিকা একটা আরেকটার পরিপূরক, জীবন না থাকলে জীবিকা অর্থহীন হয়ে পড়ে। তেমনি জীবিকা না থাকলে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে।”
লকডাউন তুলে দেওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল মন্তব্য করে মাশরাফি বলেন, “অর্থনীতির চাকা ঠিক রাখার জন্য, সবাই মিলে যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে, এটা সময়ের ব্যাপারই ছিল। পরবর্তি এক বছর যদি সেটা কন্টিনিউ করে তাহলে আমাদের কোনো না কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হত। ”
তবে এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেবল জরুরি প্রয়োজনের কাজটুকু সেরে মানুষ যেন দ্রুত ঘরে ফিরে যান, সে অনুরোধ জানান জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার। “আমার মনে হয়, এটা এখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আমি নিজে কতটা ভালো বুঝি, আমার আসলে কতটুকু সতর্কতার সাথে চলা উচিৎ সেটা বোঝা উচিৎ সবার ”বলেন মাশরাফি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও’র একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতি ছয়জনে একজন কর্মহীন হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক এবং নিম্ন মজুরিতে যারা কাজ করেন বা যেসব যুব নারীরা কাজ করেন তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর তৈরি পোশাক শিল্পে ২৩ বিলিয়ন ডলারের মতো রপ্তানি হতে পারে। এটা আমাদের রপ্তানির প্রায় অর্ধেক। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব কী পরিমাণ হয়েছে। জীবন ও জীবিকা উভয়কেই আমাদের চালু রাখতে হবে। “যদিও এটা আমাদের জন্য আত্মঘাতী, কিন্তু আমাদের মানুষকে বাঁচতে দিতে হবে। সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবিকা চালু রাখতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ”বলেন তিনি।
তবে লকডাউন তুলে দিলেও করোনাভাইরাসের হটস্পট বলে যেসব এলাকা চিহ্নিত রয়েছে, সেগুলোর দিকে আলাদাভাবে নজর রাখতে অনুরোধ করেন টাঙ্গাইল -৬ আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু।
তিনি বলেন, ‘যেসব এলাকায় ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি সেগুলোকে কৌশলে লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেগুলোকে ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সংক্রমিত লোকগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে হবে, তাদের আইসোলেট করতে হবে।’