নোয়াখালী, ফেনী, সাতক্ষীরা, নওগাঁ ও ঝিনাইদহে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি

863

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২০ (বাসস) : করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বাসসের নোয়াখালী, ফেনী, সাতক্ষীরা, নওগাঁ ও ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতারা জানান-
নোয়াখালী : জেলা সদরে ৪১ জন, বেগমগঞ্জ ৩৪ জন, সেনবাগ ৭ জন, সোনাইমুড়ি ৮ জন ও চাটখিল ৬ জনসহ ১ দিনে রেকর্ড ৯৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি জেলার মধ্যে ১ দিনে সর্বোচ্চ। এনিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭৫ জন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোমিনুর রহমান আজ বাসস বলেন, বেগমগঞ্জে ২৬০ জন, কবিরহাটে ৬২ জন, সদরে ১২১ জন, চাটখিলে ৩৭ জন, সোনাইমুড়ীতে ৩৬জন, সুবর্ণচর ১৭, সেনবাগে ২৮জন, কোম্পানীগঞ্জ ৮ জন ও হাতিয়ায় ৬ জন সহ জেলায় মোট ৫৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এর মধ্যে, বেগমগঞ্জে ৭ জন, সদরে ৬, চাটখিল ১২, সোনাইমুড়ি ৬ জন, হাতিয়ায় ৪ জন, কবিরহাট ১ জন ও কোম্পানীগঞ্জ ৫ জনসহ মোট ৪১ জন আইসোলেশন থেকে করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। সোনাইমুড়িতে ২ জন, বেগমগঞ্জে ৬ জন, সেনবাগে ১ জন ও সুবর্ণচর ১ জনসহ মোট ১০ জন মারা গেছেন।
বর্তমানে বেগমগঞ্জে ২৪৭ জন, কবিরহাটে ৬১ জন, সদর উপজেলায় ১১৫ জন, চাটখিলে ২৫ জন, সোনাইমুড়ি ২৮ জন, সুবর্ণচর ১৬ জন, সেনবাগ ২৭ জন, কোম্পানীগঞ্জ ৩ জন, হাতিয়ায় ২ জনসহ ৫২৪ জন শনাক্তকৃত রোগি রয়েছেন। এর মধ্যে, ৫০৩ জন হোম আইসোলেশন ও ১৯ জন জেলা কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। বয়স্ক ২ ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজিটিভ আসে। তাদেরকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, তাদের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে, তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার দাস বলেন, উপজেলায় ৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজিটিভ আসে। তাদেরকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, তার বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করে, তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান বলেন, উপজেলায় ৭ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজিটিভ আসে। তাদেরকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, তাদের বাড়ি লকডাউন ঘোষনা করে, তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, উপজেলায় ৬ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজিটিভ আসে। তাদেরকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, তার বাড়ি লকডাউন ঘোষনা করে, তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
ফেনী : জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন আজ বাসসকে জানান, জেলায় একদিনে ৪৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে ফেনীতে শনাক্তকৃত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৩৬ জনে দাঁড়ালো।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষার পর উল্লেখিত সংখ্যক রোগী শনাক্ত হন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, এ পর্যন্ত ৫৫ জন কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ হয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩জন।
তিনি জানান, শনাক্তকৃত করোনা রোগীদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৭ জন, দাগনভূঞায় ৩৭ জন, সোনাগাজীতে ১৯ জন, পরশুরাম ৭ জন, ফুলগাজী ৬ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৫ জন এবং অন্যান্য জেলা হতে ফেনীতে শনাক্ত হয়েছেন ৫জন।
সাতক্ষীরা : গত ২৪ ঘন্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত কৃষক পিয়ার আলী (৩৫) সদর উপজেলার ঘোনা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে এবং মৃত শহীদুল গাজী (৬০) সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান গাজীর ছেলে।
মৃত কৃষকের শ্বশুর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাই জানান, তার জামাই পিয়ার আলী তাদের বাড়িতে থেকে চাষকাজ করতো। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার দুপুর ১ টার দিকে তার জামাই পিয়ার আলীকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। গতকাল রাত ৯ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
মৃত শহীদুল গাজীর পুত্র তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের তাইয়ুম গাজী জানান, তার বাবা হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী, করোনার উপসর্গ জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে বৃহষ্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আজ ভোর ৬ টায় তার মৃত্যু হয়।
জেলা সিভিল সার্জন হুসায়েন সাফায়েত জানান, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে পিয়ার আলী ও শহীদুল ইসলাম যথাক্রমে বুধ ও বৃহষ্পতিবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। প্রথমজন শুক্রবার রাত ৯ টায় এবং অপরজন শনিবার ভোর ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্বাস্থ্য বিধি মেনে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মৃতদের লাশ দাফন করা হয়। তাদের বাড়িসহ আশেপাশের ১০ টি করে বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
নওগাঁ : জেলায় নতুন করে ৩ পুলিশসহ মোট ১৩ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সিভিলসার্জন অফিস সুত্রে শুক্রবার রাতে প্রাপ্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে জানা গেছে আক্রান্ত ১৩ ব্যক্তির মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৩ পুলিশ সদস্যসহ ৯ জন, পোরশা উপজেলায় ১ জন, মান্দা উপজেলায় ১ জন, মহাদেবপুর উপজেলায় ১ জন এবং ধামইরহাট উপজেলায় ১ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৯ জন-এ।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে জেলায় হোম কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়েছে ৮ জনকে। এদের মধ্যে বদলগাছি উপজেলায় ৫ জন এবং আত্রাই উপজেলায় ৩ জন।
কন্ট্রোলরুম সুত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সর্বমোট হোম কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়েছে ৭ হাজার ৪৯৩ জনকে। শুক্রবার পর্যন্ত ১৪ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় হোম কোয়ারেনটাইন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৬ হ্জাার ৫৪৮ জনকে। বর্তমানে জেলায় হোম কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন ৯৪৫ জন।
বর্তমানে হাসপাতালে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ৬ জন এবং এ পর্যন্ত মোট সুস্থ্য হয়েছেন ৬৩ জন।
ঝিনাইদহ : জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জসিম উদ্দিন (৩৫) নামের একজন মারা গেছেন। আজ সকালে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান। নিহত জসিম উদ্দিন সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের শওকত আলীর ছেলে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আইয়ুব আলী জানান, গত ২৭ মে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে জসিম উদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি হন। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার আগেই সকালে তিনি মারা যান। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের করোনা কমিটির তত্ত্বাবধানে জসিম উদ্দিনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।
অপরদিকে কোটচাঁদপুরে ঢাকা ফেরত ২২ বছর বয়স্ক এক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগমের বরাদ দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসার পর তার নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার ওই পুলিশ সদস্য’র শরীরে করোনা পজেটিভের রিপোর্ট পায়। ডা. রশিদ জানান, বর্তমানে আক্রান্ত রোগী হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন। করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্য’র বাড়ি লক-ডাউন করা হয়েছে। সেই সাথে ঢাকা থেকে আগত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে সচেতন করা হচ্ছে।