দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মারা গেছেন ২৩ জন

488

ঢাকা, ২৯ মে, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন মত্যুবরণ করেছেন। এ নিয়ে দেশে এই পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৮২ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১১ হাজার ৩০১টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৫২৩ জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে শনাক্ত ৪২ হাজার ৮৪৪ জন রোগী রয়েছেন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ১৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৫৯০ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৪৯৪ জন বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২৯ জন। আজ আক্রান্তের হার ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এর আগের দিন ছিল ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগের দিন সুস্থতার হার ছিল ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনা ভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সর্বাধিক ১২ হাজার ৯৮২টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৯ হাজার ২৬৭টি। আগের দিনের চেয়ে আজ ৩ হাজার ৭১৫টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৪৯টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৩০১টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৯ হাজার ৩১০টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৯৯১টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭টি।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন এবং সিলেট বিভাগে ১ জন রয়েছেন। এলাকা ভেদে ঢাকা শহরে ৪ জন, ঢাকা জেলায় ১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ জন, মানিকগঞ্জে ১ জন, কিশোরগঞ্জে ১ জন, চট্টগ্রাম শহরে ৬ জন, কুমিল্লায় ১ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, ফেনীতে ১ জন, রংপুরে ২ জন, সিলেটে ১ জন ও ভোলায় ১ জন মারা গেছেন।
বয়স বিশ্লেণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন, ২১ বছর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৩২৮ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৫ হাজার ১৪০ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭২ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৮১০ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ৭০০ শয্যা। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৭ হাজার ২৫০টি। ঢাকা সিটির বাইরে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩৯৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১০৬টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ হাজার ৯শ’ জনকে। এখন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৫ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৯১৮ জন। এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৭০ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬০ হাজার ২৭৫ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘন্টায় সংগৃহিত হয়েছে ১৫ হাজার ২৬৫টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৪ লাখ ৭০ হাজার ২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ করা হয়েছে ২১ হাজার ৬শ’টি এবং এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২১ লাখ ৪ হাজার ৫৩৪টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৮টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৫৭টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৮৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৩টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২১১ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১০ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৪১১ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫১০ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৮ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৮ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৬১১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২৭১ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৩০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৮ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৫০৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ২২১ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৪ জন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।