নীলফামারীতে পরীক্ষামূলকভাবে ক্যান্টালপ ফলের চাষে সাফল্য

720

॥ ভুবন রায় নিখিল ॥
নীলফামারী, ১৮ মে, ২০২০ (বাসস) : জেলার সৈয়দপুরে উচ্চ ভিটামিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ক্যান্টালপ ফলের চাষ হয়েছে। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে কৃষক আহসান-উল-হক বাবু তার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ওই ফলের পরীক্ষামূলক চাষ করে সফল হয়েছেন।
বিদেশী বাঙ্গি খ্যাত এই ক্যান্টালপ চাষ করে সফল হয়ে এখন উচ্ছ্বসিত কৃষক আহসান-উল হক বাবু। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাজারজাত করা যাবে তার ক্ষেতের ফসল। তবে বৈশ্বিক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে ফসলের বাজার নিয়ে কিছুটা দুঃচিন্তায় তিনি।
আহসান-উল-হক বাবু এলাকার একজন আদর্শ কৃষক। ‘সজীব সীড’ নামে তার রয়েছে বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন ও বাজারজাতের পাশাপাশি তিনি দেশি-বিদেশী নিত্য নতুন উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ফল, শাক-সবজি ও ফসলের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে থাকেন। সেই সঙ্গে দেশীয় বিলুপ্ত প্রায় ফসল ধান, গম ও ভূট্টার চাষাবাদ ফিরে আনতে নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাতে তিনি সফলতাও পেয়েছেন। তার গবেষণা ও অনুসন্ধানী চিন্তা থেকে চলতি মৌসুমে সাড়ে তিন বিঘা উঁচু জমিতে বিদেশী ক্যান্টালপ ফল চাষ করেন।
কৃষক আহসান-উল- হক বাবু জানান, তিনি ইন্টারনেট থেকে ক্যান্টালপ জাতের ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হন। পরে ক্যান্টালপের বীজ সংগ্রহ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বপণ করেন ট্রেতে। এরপর ১৭ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে চারা তুলে জমিতে রোপন করেন। প্রযুক্তিতে আংশিক অর্গানিক সার প্রয়োগ আর সারের যথাযথ কার্যকারিতা রক্ষায় মালচিং পেপার ব্যবহার করা হয়। ফলে যথারীতি নিবিড় পরিচর্যার কারণে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতে ক্যান্টালপ ফল আসা শুরু হয়। এখন তার ক্ষেতের গাছের মাচায় ঝুলছে বিভিন্ন আকৃতির পরিপুষ্ট ক্যান্টালপ ফল।
কৃষক বাবু জানান, তার জমিতে ক্যান্টালপ চাষে সার, বীজ, মাচা তৈরিসহ পরিচর্যায় প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। সেই হিসেবে তার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে সোয়া দুই লাখ টাকা। প্রতিটি ফলের ওজন হয়েছে ৬০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত। কেজি ক্যান্টালপের বাজার দর ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। যে হারে ফলন এসেছে তাতে খরচ উঠার পরও ওই খরচের পরিমাণের অধিক লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু তার সে স্বপ্নে এখন বাধ সেধেছে করোনা পরিস্থিতি।
তিনি বলেন, ‘ফলন ভালো হলেও দেশের লকডাউন পরিস্থিতিতে বাজারজাত নিয়ে বড় দুঃচিন্তায় আছি। বিক্রি করতে না পারলে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুণতে হবে’। ফলন বাজারজাতে কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী বিভাগের সহযোগিতা চান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, ক্যান্টালপ উচ্চ ভিটামিন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি বিদেশী ফল। বিদেশ থেকে আমদানি করে এ ফল আমাদের দেশে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে। আহসানুল-হক বাবুর এমন উদ্যোগে দেশেই ওই ফল ফলানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন,‘কৃষক আহসান-উল-হক বাবু একজন সফল উদ্যোক্তা। শুধু ক্যান্টালপই নয়, তিনি নিত্য নতুন ফসলের চাষ করেন। বিলুপ্ত প্রায় অনেক ফসলের চাষে সফল হয়েছেন তিনি। তেমনি ক্যান্টালপ চাষেও সফল হয়েছেন। সেটির বাজার সৃষ্টিতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অবশ্যই থাকবে’।