শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে : চুমকি

403

ঢাকা, ১৮ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, ‘শিশুর সার্বিক অধিকার সুরক্ষায় শিশু অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমরা আশা করছি, এটা করতে পারবো।’
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ ইত্তেফাক অফিস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন : শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোস্যাল ডেভলপমেন্ট (এএসডি) ও দৈনিক ইত্তেফাক যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএসডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা।
দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য বেগম জেবুন্নেসা আফরোজ, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি ও বেগম কামরুন নাহার, সিনিয়র সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খোন্দকার মোস্তান হোসেন।
ইত্তেফাকের মহিলাঙ্গন বিভাগীয় সম্পাদক রাবেয়া বেবির সঞ্চালনায় গোলটেবিলে এএসডির নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী, এএসডির উপ-নির্বাহি পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস শহীদ মাহমুদ, ইউনিসেফের সামাজিক নীতি বিশেষজ্ঞ হাসিনা বেগম, পুলিশের উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের ডিসি ফরিদা ইয়াসমীন, আইএলও’র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মনিরা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ইউ কে এম ফারহানা সুলতানা বলেন, ‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৩ শিশু সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’ তিনি বলেন, নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের কাঠামোগত একটি দুর্বলতা হচ্ছে শিশুদের জন্য আলাদা কোন দায়িত্বশীল অধিদপ্তর না থাকা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন সর্বদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ । দেশে দারিদ্রের হার কমে আসছে। দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আগে দেশে বাল্য বিবাহ ছিল অগণিত। বাল্য বিবাহ ঠেকাতে কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন করে দেয়া হয়েছে। সরকারের কার্যকর ভূমিকার কারণে বাল্যবিবাহ এখন উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। কোথাও কোন শিশু নির্যাতনের ঘটনা নজরে আসলে সে বিষয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দুই কোটি নারীকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গর্ভবতী মা’দেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। নারীদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার করা হয়েছে। দরিদ্র শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত হয়ে যাচ্ছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তব^ায়ন করছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনুসন্ধান করে দেখা গেছে একটি চক্র শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি এবং মাদক ব্যবসায় ব্যবহার করে। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মাও শিশুদের ভিক্ষা বৃত্তিতে ব্যবহার করে থাকে। এই ক্ষেত্রে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি বলেন, শিশু বান্ধব সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী সমাজের বিত্তবানদের পথশিশু ও হতদরিদ্র শিশুদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানান।
সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি বলেন, আমরা সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জন করেছি এবং পুরস্কৃত হয়েছি। এখন আমাদেরকে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) করতে হবে। এক কথায় শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে এসডিজির লক্ষমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, শিশুর প্রতি রাষ্ট্রের আগ্রহের ঘাটতি নেই। তিনি দারিদ্র্য কমানোর জন্য যার যার জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় আরও বাড়াতে হবে।
এএসডির উপ-নির্বাহি পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গৃহকর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগ হলো শিশু। তাই গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা দ্রুত আইনে পরিণত করতে হবে।