২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ৮,৫৮২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত ১,২০২ জন

630

ঢাকা, ১৫ মে, ২০২০ (বাসস) : গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ৮ হাজার ৫৮২টি নমুনা পরীক্ষায় দেশে ১ হাজার ২০২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন এ ভাইরাসে শনাক্ত ২০ হাজার ৬৫ জন রোগী রয়েছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস থেকে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৮৮২ জন। গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৫২১ জন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ২৭৯ জন এবং আগের দিন সুস্থ হয়েছেন ২৪২ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৯টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৭ হাজার ৮৩৭টি। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৭০২টি বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকায় ২০টি ও ঢাকার বাইরের ২১টিসহ দেশের ৪১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫৮২টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৭ হাজার ৩৯২টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা ১ হাজার ১৯০টি বেশি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৫১২টি।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরী ও এ বিভাগের জেলাগুলোয় করোনায় আক্রান্ত শতকরা হার একটু কমেছে। এর শতকরা হার ৮০ শতাংশের নিচে নেমেছে। আক্রান্তদের ৭৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ এখন ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫৮ দশমিক ১১ শতাংশ এবং এই বিভাগের জেলাগুলোতে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেই সর্বাধিক আক্রান্ত।’
নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত বেড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ ওই বিভাগে। তারপরেই রয়েছে ময়মনসিংহ, সেখানে এর হার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরপর রংপুর বিভাগে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ, সিলেটে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং বরিশালে ১ দশমিক ১০ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত।’
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে করোনায় দেশে ২৯৮ জন মারা গেছেন। ১৫ জনের মধ্যে পুরুষ ৭ জন, নারী ৮ জন। এদের মধ্যে বয়সের হিসাবে ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ , ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৩, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ২৫৯ জন। মোট আইসোলেশনে আছেন ২ হাজার ৭৪৮ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৮ হাজার ৬৩৪টি। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ২ হাজার ৯০০টি। ঢাকা সিটির বাইরে শয্যা হয়েছে ৫ হাজার ৭৩৪টি। এছাড়া আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩২৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে এসেছেন ২ হাজার ৭৯৭ জন। অদ্যাবধি কোয়ারেন্টিনে এসেছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৬ হাজার ৮০৫ জন। সারাদেশে ৬৪ জেলায় ৬১৭টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত। তৎক্ষণিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ১৬৫ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ৫ হাজারটি। বিতরণ হয়েছে ৩০ হাজার ১২০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২২ লাখ ১৭ হাজার ৩৩৯টি। বিতরণ হয়েছে ১৮ লাখ ৭১ হাজার ৬৬টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৯৩টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৪৫টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৫৪ লাখ ২ হাজার ৩০৩টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৭৫ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১২ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৮০ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ১১৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৮৭ হাজার ২০ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৪ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৮৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৬১৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১৭৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৯২১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৪ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৯৬৫ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮৯ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৬ হাজার ৬৪৭ জন এবং এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।