নাটোরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন

889

নাটোর, ১২ মে, ২০২০ (বাসস) : শস্য ভান্ডার খ্যাত নাটোরে এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবাদী জমির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত জমিতে এবার পেঁয়াজের আবাদ হয়। জেলার চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টনের অধিক পেঁয়াজ যাবে দেশের অন্যান্য এলাকায়।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বাসস’কে জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। এরমধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলায় সর্বাধিক ২ হাজার ৮৬০ হেক্টর, নাটোর সদরে ৪২০ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় ৩৪৫ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ২৩৫ হেক্টর, বড়াইগ্রাম ও লালপুরে ১৯৫ হেক্টর করে এবং সিংড়া উপজেলায় ৫৫ হেক্টর।
জেলায় আবাদী জমির মধ্যে চারা পদ্ধতিতে আবাদী জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর, কন্দ ৭৬৫ হেক্টর এবং কদম অর্থাৎ বীজ পেঁয়াজের আবাদী জমির পরিমাণ ছিলো ৭৩ হেক্টর।
সাধারণত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো’আশ মাটি পেঁয়াজ চাষে উপযোগী। গভীর চাষ দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে পেঁয়াজের বীজ থেকে উৎপাদিত চারা এবং কন্দ পেঁয়াজ অর্থাৎ ছোট পেঁয়াজ সরাসরি জমিতে রোপন করা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। জমিতে প্রয়োজন হয় পরিমাণমত ইউরিয়া, ডিএপি, এমওপি ও গোবর সার। তবে এই এলাকার কৃষক জমিতে লবন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে পেঁয়াজের ফলন বৃদ্ধি করে থাকেন। জমিতে নিয়মিত সেচ প্রদান ও আগাছা নিড়াতে হয়।
কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাহেরপুর জাতের স্থানীয় সুস্বাদু ও আকর্ষনীয় পেঁয়াজ চাষে কৃষকরা অভ্যস্ত। তবে কৃষি বিভাগ নতুন উদ্ভাবিত বারি-১ জাতের উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের সম্প্রসারণে বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে একবিঘা জমি চাষের প্রয়োজনীয় বীজ, সার ও সেচের অর্থ প্রদান করে।
নাটোর সদর উপজেলায় স্থাপিত ১০টি প্রদর্শনী খামারের মধ্যে তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বিঘায় ৮০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন। একই উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের আগদিঘা এলাকার কৃষক সবুজ আলী তাহেরপুর জাতের পেঁয়াজ চাষ করে ৭০ মণ ফলন পেয়েছেন বলে জানান। নলডাঙ্গা উপজেলার রামসার-কাজীপুর এলাকার কৃষক জিয়াউর রহমান তিন বিঘা জমিতে তাহেরপুর ও বারি-১ জাতের পেঁয়াজ আবাদ করে উভয় ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ মণ করে ফলন পেয়েছেন। এ পর্যন্ত ৫০ মণ পেঁয়াজ বিভিন্ন দরে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি। সর্বোচ্চ এক হাজার ৮৫০ টাকা মণ দরেও পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন জানিয়ে চলতি মৌসুমে লাভবান হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন কৃষক জিয়াউর রহমান।
কৃষি বিভাগ নির্ধারিত প্রতিদিন প্রতিজনের পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ গ্রাম এবং বছরে ৯ কেজি ১২৫ গ্রাম। এই হিসেবে জেলার মোট ২০ লাখ মানুষের বাৎসরিক পেঁয়াজের চাহিদা ১৮ দগশমিক ২৫০ টন। জেলায় মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের পরিমাণ ৭২ হাজার ২৩৭ টন। অর্থাৎ জেলার সকল মানুষের বাৎসরিক চাহিদা পূরণের পরে উদ্বৃত্ত থাকছে ৫৩ হাজার ৯৮৭ টন-যা যাচ্ছে দেশে পেঁয়াজ ঘাটতি এলাকাগুলোতে।
সুব্রত কুমার সরকার বলেন, বিগত সময়ে দেশে পেঁয়াজের উর্ধ্বমূল্যের কারণে এবার কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেন। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও তৎপরতা এবং কৃষকদের সদিচ্ছা ও চেষ্টার কারণে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে-যা জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য ঘাটতি এলাকার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।