২৪ ঘন্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৩১৩, আক্রান্ত ৬৩৬ জন

785

ঢাকা, ৯ মে, ২০২০ (বাসস) : গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩১৩ জন। এনিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪১৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ১২২ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১৯১ জন।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩৬ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৭০ জন। গতকালের চেয়ে আজ আক্রান্ত ৭৩ জন কম। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭০৯ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় ৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশে ২১৪ জন মারা গেছেন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেশে করোনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মৃতের হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃতের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ১৭৭, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৭৬, সিলেট বিভাগে ১৬৩, রংপুর বিভাগে ২৬৩, খুলনা বিভাগে ২১১, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১১, বরিশাল বিভাগে ১৩০ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৫৩ জন। এই হিসাবে ঢাকা শহরে শনাক্ত ৫৮ দশমিক ২৮ শতাংশ, ঢাকা বিভাগের ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, সিলেটে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রংপুরে ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, খুলনায় ২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশালে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে এখন সর্বাধিক সংখ্যক শনাক্ত ব্যক্তি আছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ হাজার ২৪৭টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৫ হাজার ৭০৭টি। নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের তুলনায় ৪৬০টি কম। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৩৫টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ৪৬৫টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৫ হাজার ৯৪১টি। গতকালের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা ৪৭৬টি কম। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯১৯টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৮ জনের সবাই পুরুষ। এর মধ্যে ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৯৬ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২ হাজার ১৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৩ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৪৩ জন। মোট আইসলেশন সংখ্যা ৮ হাজার ৬৩৪টি। গতকালের তুলনায় বেড়েছে ৪৯টি চট্টগ্রাম বিভাগে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫শ’টি এবং ময়মনসিংহ নার্সিং ডারমেটরিতে আরও ২শ’টি আইসলেশন শয্যার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা মহানগরীতে ২ হাজার ৯শ’টি। ঢাকা সিটির বাহিরে শয্যা রয়েছে ৫ হাজার ৭৩৪টি। আর দেশে আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩২৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৭৫৫ জনকে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৮ হাজার ৪০৫ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ৭১৮ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১ লাখ ৭১ হাজার ২২২ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩৭ হাজার ১৮৩ জন।
সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৯৫৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেয়া যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার ৮শ’টি। বিতরণ হয়েছে ২২ হাজার ৭শ’টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২০ লাখ ৯৩ হাজার ২৯০টি। বিতরণ হয়েছে ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ২১৪টি। বর্তমানে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৬টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩১২টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ লাখ ২২ হাজার ৮৪৮টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ও ওয়েবসাইটে গত ২৪ ঘন্টায় ২৭ হাজার ৬৭৬ জন এবং এ পর্যন্ত ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৫০ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬৮৬ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ২৬ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৫৯ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৭৩৫ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৩২ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৮ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৪৮৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ হাজার ২৯৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১৩৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৫ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৮ মে পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৮৭ হাজার ৭২৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৫ হাজার ৪২৯ জন এবং এ পর্যন্ত ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৭৪ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, রমজানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।