মুন্সীগঞ্জে অনলাইন লাইভ ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া

592

মুন্সীগঞ্জ, ৭ মে, ২০২০ (বাসস) : করোনাভাইরাসের কারণে চলমান স্থবিরতার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে মানসম্মত শিক্ষা পৌঁছে দিচ্ছে মুন্সীগঞ্জের পিপিআই রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখায় অচলতা দেখা দেয়। তাই অনলাইনে লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষা দান করা চলছে। জেলায় প্রথমবারের মত এই লাইভ ক্লাসে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
প্ল্যাটফর্মটির সাথে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শাখার প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী যুক্ত আছে। অনেক রকম বৈচিত্রতার মধ্যে ক্লাসগুলো পরিচালিত হচ্ছে। গত ৩ মে থেকে ফেসবুক গ্রুপে চলছে লাইভ ক্লাস। ক্লাসগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুর্দান্ত সাড়া পাচ্ছে, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলা, সমাজকর্ম, অর্থনীতি, পৌরনীতি, আইসিটি ও ধর্মসহ সকল বিষয়েই লাইভ হচ্ছে।
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় পড়ালেখা চলমান রাখতে এই লাইভ ক্লাস কার্যকারী এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। মফস্বল শহর মুন্সীগঞ্জের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটি বিশেষ একটি পরিবেশ তৈরী করেছে।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারা দেশ যখন এক ধরণের অচলতায় তখন পিপিআই রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের উদ্যোগটি এখানে আলোড়ন তুলেছে। ফলাফলের দিক দিয়ে জেলার শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপিঠটি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রান্তে বাড়িতে অবস্থান করছেন। যে যেখানে আছেন ইন্টারনেটের বদৌলতে সেখান থেকেই যুক্ত হচ্ছেন। কোন রকম সীমাবদ্ধতা তাদের আটকে রাখতে পারেনি। বিদ্যাপীঠ খোলা থাকার মতই ক্লাস রুটিন করে ঠিক নির্ধারিত সময়েই লাইভ ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে। লাইভ ক্লাসেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত, পড়ানোর পর হোমওয়ার্ক দেয়া, আবার হোমওয়ার্ক আদায় সবই হচ্ছে। ক্লাস বন্ধ থাকছে শুধু শুক্রবার। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শাখায় প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণির ক্লাশগুলো চলছে। প্রতি ক্লাশের পর আবার ১০ মিনিট করে বিরতি দেয়া হচ্ছে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ শাখার জন্য আলাদা ‘পিপিআইএমএসসি লাইভ গ্রুপ’ খুলে একেবারে নতুন আঙ্গিকে চলছে পাঠদান। নতুন এক অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ কৌতুহল কাজ করছে। পাঠদানেও এসেছে নানা রকম নান্দনিকতা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্থবির জীবনে ঘরে এক রকম হাপিয়ে যাচ্ছিল শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে যেন শিক্ষার্থীদের স্পন্দন ফিরেছে। সাথে এগিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনায়ও। বন্ধের সুযোগটি যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। আর ক্লাস শুরু আগেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের লাইভ ক্লাসের কৌশল নিয়ে সফল যোগযোগের কারণে কোনরকম সমস্যাই হচ্ছে না।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে এসব ধারনাই পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্লাস চলাকালে কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে শিক্ষার্থীরা কমেন্ট বক্সে লিখছে। শিক্ষকগণ সাথে-সাথে তাদের সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন। নিয়মিত বাড়ির কাজ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাজ করে কমেন্ট বক্সে, খাতাতে উত্তর লিখে তার ছবি গ্রুপে আপলোড করে বা শিক্ষকদের ইনবক্সে দিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষকগণ সেগুলো দেখে প্রয়োজনীয় সমাধান দিচ্ছেন। আর এই সব কিছুই মনিটর করছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ। তিনি ক্লাসের ত্রুটি-বিচ্যুতি, সফলতা সব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তাই ক্লাসের মানও ভালো হচ্ছে।
এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মেজর মোহাম্মদ শরীফ উজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মুন্সীগঞ্জের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত এই স্কুল এন্ড কলেজে গত ৩ মে থেকে অনলাইনে লাইভ ক্লাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের রেকর্ড করা ভিডিও এবং হ্যান্ড-আউট সরবরাহ, পড়া দেয়া ও আদায় করার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। শিক্ষার্থীদের পাঠদান আরও ফলপ্রসূ করতে এই লাইভ ক্লাসের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ ব্যাপারে হাজারো সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের আত্মপ্রত্যয়ী শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ যেভাবে তাদের ঐকান্তিক চেষ্টা এবং নিষ্ঠার সাথে ক্লাসগুলো উপভোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছেন, তা সত্যিই ভুয়সী প্রশংসার যোগ্য। এছাড়া অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাড়া আমাদেরকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করছে। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারের। যার সার্বক্ষণিক অনুপ্রেরণা আমাদের সাফল্যের পথে পাথেয়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই পরিস্থিতিতে ডিজিট্যাল ক্লাস নেয়া যেটা খুবই কার্যকর হবে। অনেক দেশেই এটা হচ্ছে। আমি চাই এটা অব্যাহত থাকুক। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে আছে, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছে না, ঘরে বসে আছে, তারা নিয়মিত পড়াশোনার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে যতটুকু পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন হবে আমরা সেটা করবো। যদি এ উদ্যোগ সফল হয় তাহলে আমরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও এভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে পারবো।