ফেনীতে ভুট্টা চাষে সম্ভাবনা দেখছে কৃষক ও কৃষিবিদ

863

ফেনী, ৬ মে, ২০২০ (বাসস) : যে জমিতে আগে বোরো ধান চাষ করতেন, একই জমিতে কম খরচে ভুট্টা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন ফেনীর কৃষকরা। এতে দিন-দিন সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে ভুট্টা চাষ। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের সহায়তা ও কৃষকের আগ্রহ বিদ্যমান থাকলে এই অঞ্চলের কৃষকরা ভুট্টা চাষে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনী সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ১৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ফেনী সদরে ২৫ হেক্টর, সোনাগাজীতে ৪৭ হেক্টর, ছাগলনাইয়া ২১ হেক্টর, পরশুরাম ৭ হেক্টর, দাগনভূঞায় ১৫ হেক্টর এবং ফুলগাজী ২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রণোদনা ও কৃষি সম্প্রসারণের প্রদর্শনীর মাধ্যমে চাষ হয়েছে ৩৪ হেক্টর। বাকি ১০৬ হেক্টর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে করেছে। কৃষি কর্মকর্তা ও অফিসারগণ নিয়মিত কৃষকদের ভুট্টা চাষে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব কর্মসূচির আওতায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জেলার ১০০ জন কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। চাষের জন্য বিনামূল্যে সার ও ভুট্টা বীজ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। বিনামূল্যে সার ও বীজ ছাড়াও প্রয়োজনীয় সব সেবা বিনামূল্যে কৃষক পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ফেনীতে ভুট্টা চাষ দিন-দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
উপ-পরিচালক বলেন, বিগত ৫ বছরের পরিসংখ্যান হিসেব করলে দেখা যায়, ফেনীতে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর ভুট্টা চাষ হয়েছে ৩ হেক্টর জমিতে, ১৬-১৭ অর্থ বছর ৪ হেক্টর জমিতে। এর পরের তিন অর্থ বছরে ক্রমান্বয়ে ৭৭, ১৩০ ও ১৪০ হেক্টর ভুট্টা চাষ হয়েছে। বোরো ধানের তুলনায় এর খরচ ও ঝামেলা কম তাই কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ভুট্টার গড় ফলন প্রতি হেক্টর জমিতে ৯ দশমিক ৫ টন। ২০২০ সালে বিগত বছরের ফলনকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বাসসকে বলেন, ফেনী সদরের কাজীরবাগ, বালিগাঁও ও ছনুয়াসহ সদর উপজেলায় মোট ৩৫টি ভুট্টা প্রদর্শনী রয়েছে। প্রদর্শনী ও প্রণোদনার মাধ্যমে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি, যাতে করে তারা ভুট্টা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় এখন ফসল কর্তন শুরু হয়েছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে।
তিনি বলেন, কৃষক খুব সহজে কম খরচে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। উত্তোলিত ফসল মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটানো ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে কৃষক লাভবান হবেন। ভুট্টা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অনেক পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও কোম্পানি কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ভুট্টা ক্রয় করে থাকেন। ফলে মধ্যভোগীর কোন সুযোগ থাকে না, কৃষক ন্যায্য মূল্য পেয়ে থাকেন। তিনি জানান, ভুট্টার বেডের ফাঁকে সবজি চাষ কেেরা কৃষক লাভবান হতে পারেন।
সোনাগাজী উপজেলা সবচেয়ে বেশী চাষাবাদ ও সম্ভাবনাময় হওয়ার কারন প্রসঙ্গে কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, মাটি, আবহাওয়া এবং কৃষকের মনোভাব ভুট্টা চাষের অনুকূলে। তাই এখানে চাষের পরিমাণ বেশী এবং ফলনও বেশী হবে।
তিনি বলেন, ফেনীতে স্থানীয়ভাবে ভুট্টার বাজার রয়েছে। তাই কৃষকদের পণ্য বিক্রয়ের চিন্তা কম। দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান স্টার লাইন গ্রুপের পরিচালক মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ফেনীতে ভুট্টা চাষ যতোটুকু হয় তা চাহিদার তুলনায় এখনো অপ্রতুল। আমরা সাধারণত উত্তরবঙ্গ থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করলেও ফেনীর কৃষকদের কথা ভেবে স্থানীয়ভাবেও সংগ্রহ করে থাকি। ক্রয়কৃত ভুট্টা দিয়ে মূলতঃ আমরা পোল্ট্রি ফিড তৈরি করি।
সোনাগাজীর বগাদানা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল হক বলেন, বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ কম এবং সরকারের সহায়তা থাকায় আমরা এবারও ভালো লাভ আশা করছি।
ফেনীর কাজিরবাগে ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল হাই। তিনি বলেন, বোরো মৌসুমে ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষ বেশি লাভজনক। এছাড়াও একই জমিতে একইসময় সবজি চাষ করার সুযোগ রয়েছে।