ভোলা সদর উপজেলায় জুনের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ

530

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ১ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : ভোলা সদর উপজেলা আগামী জুনের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হবে। ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম ৮৬ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ উপজেলায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ৪৭ হাজার ৫৮৬ জন গ্রহকের মাঝে ১ হাজার ১৩২ কি. মি. বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। আর প্রয়োজন রয়েছে ১৭৭ কি. মি. বিদ্যুৎ লাইনের। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্লোগানকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে জেলার দৌলতখান উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। আর এপ্রিলের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পাবে তজুমুদ্দিন উপজেলা। এছাড়া চলতি বছরের মধ্যে সমগ্র জেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজ্যার (জিএম) মো. কেফায়েতউল্লাহ বাসস’কে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে গ্রাম বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় তার যোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা যদি শতভাগ বিদ্যুতের বিশেষ এ উদ্যোগ না নিতেন তবে অন্ধকারেই থেকে যেত এসব জনপদ।
জিএম আরো বলেন, সমগ্র জেলাকে ২০১৮ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে মহা-পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথম উপজেলা হিসেবে দৌলতখানকে গতবছর সম্পূর্ণ আলোকিত করা হয়েছে। এপ্রিলের মধ্যে হবে তজুমুদ্দিন ও জুনের মধ্যে সদর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার মধ্যে আনা হবে। এতে করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষার মান বাড়বে, অভাব দূর হবে বলে মনে করেন কেফায়েতউল্লাহ।
সমিতি’র এজিএম মো. আব্দুল বাসেত বাসস’কে বলেন, সদর উপজেলার প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ১ হাজার ৩০৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন প্রয়োজন। আর শতভাগ বিদ্যুতের সুফল ভোগ করবে মোট ৫৫ হাজার ৮৬জন গ্রাহক। ইতোমধ্যে পল্লী বিদ্যুতের আবাসিক লাইন দেয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৩১০জন গ্রহকের মাঝে। বাণিজ্যিক সংযোগ ৪ হাজার ৫৮৭। শিল্প-কল-কারখানর জন্য ২৩৮ এবং স্কুল কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪ হাজার ৬১১টি সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ফলে পল্লী অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্যূতায়নের প্রভাবে কমে যাচ্ছে শহর ও গ্রামের বৈষম্য।
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশারেফ হোসেন জানান, সদরের ১৩টি ইউনিয়নে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যূৎ পৌঁছে দিতে এখানে ব্যাপক কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ে সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়নের জন্য উপজেলা প্রশাসন’র পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
এদিকে আগামী জুনের মধ্যে সদর উপজেলায় ১০০ ভাগ বিদ্যুৎ বিতরনের খবরে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। মহাজোট সরকারের আমলে দ্বীপ জেলায় ব্যাপক বিদ্যুত সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়াতে মানুষের জীবন-মান বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে অবহেলিত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা এগিয়ে চলছে। চরাঞ্চলগুলোও আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। বিগত কোন সরকারের আমলে এমন উদ্যোগ গ্রহণ না হলেও বর্তমান সরকারকে এমন কাজের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ১৬ নং দক্ষিণ চর ভেদুরিয়া এম হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই মনে করেন, সরকারের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাপক বিদ্যুতায়নের ফলে লেখা-পড়ার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় কেরোসিন কিনে কুপি বা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা করতে হতো। যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতোনা। বর্তমনে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়াতে লেখা পড়া অনেকটাই সহজ হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা রাত জেগে লেখা-পড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। পড়া লেখার আগ্রাহ বাড়াচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বিদ্যুতের সুবাধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সুফলও ভোগ করছে নতুন প্রজন্ম।
উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর-চন্দ্র প্রসাদ গ্রামের শরিফ খা বাজারের ক্ষুদ্র বিক্রেতা ফয়েজ হোসেন ও বারেক আলী বলেন, বিগত দিনে তাদের এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার পর পরই বাজারের বেঁচা-কেনা শেষ হয়ে যেত। গত কয়েক বছরে এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন আসাতে অনেক রাত পর্যন্ত হাটের কার্যক্রম চলে। ফলে তাদের আয় রোজগারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ব্যাপারে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল আজ বাসস’কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত উদ্যোগের সুফল আজ প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। পল্লী অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার জনপদও আজ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। এতে করে মানুষের জীবনমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে।