বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (২য় কিস্তি) : কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ৭২,৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

162

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (২য় কিস্তি)
শেখ হাসিনা-প্রেস কনফারেন্স-করোনা
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ৭২,৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীর যাতে কষ্ট লাঘব হয় এবং তাঁরা ব্যবসা-বাণিজ্য যথাযথভাবে চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্যই তাঁর সরকারের এসব প্যাকেজ।
প্রধানমন্ত্রী, দেশবাসীকে ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবেলার এবং ভীড় এড়িয়ে চলার আহবান জানান।
সবাইকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এইটুকু চাই সবাই যেন সততার সঙ্গে কাজ করেন। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন কোনরকম দুর্নীতি, অনিয়ম বা অপব্যবহার না করেন।’
‘কেউ করবেন না, সেটাই আমার অনুরোধ। আমরা যদি সঠিকভাবে কাজ করতে পারি তাহলে সমাজের কোন স্তÍরের মানুষই কোন অসুবিধায় পড়বে না,’যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের ৪ দফা কার্যক্রম তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে-
প্রথমত, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা: সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপি’র অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪ শতাংশ ) বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করবে না।
দ্বিতীয়ত, আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন: ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।
তৃতীয়ত, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে।
এর মধ্যে উলেøখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো-
(১) বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ;
(২) ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয়;
(৩) লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ;
(৪) ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং
(৫) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রæত বা¯Íবায়ন করা; ইত্যাদি।
চতুর্থত, মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা: অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে।
‘তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে, ’যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার, স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর সৃষ্ট বিপুল চাপ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে নজিরবিহীন লকডাউন ও যোগাযোগ স্থবিরতা বিশ্ব অর্থনীতির উপর ইতোমধ্যেই ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, শিল্প উৎপাদন, রপ্তানি বাণিজ্য, সেবাখাত বিশেষত: পর্যটন, এভিয়েশন ও হসপিটালিটি খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধ্বস নেমেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু সরবরাহ ক্ষেত্রেই নয়, চাহিদার ক্ষেত্রেও ভোগ ও বিনিয়োগ চাহিদা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। আইএমএফ ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়েছে মর্মে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি পুঁজি বাজারে বিশ্বব্যাপী বিগত কয়েক সপ্তাহে ২৮-৩৪ শতাংশ দরপতন ঘটেছে।
সরকার প্রধান বলেন, ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট- এর হিসাব মতে মন্দা প্রলম্বিত হলে বিশ্ব¦ প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। যাতে বিশ্বব্যাপী বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব এই প্রথম এমন মহামন্দা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে মর্মে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাক্কলন করেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন,‘সামষ্টিক চলকসমূহের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।’
চলবে-বাসস/এএসজি-এফএন/এসএইচ/১২৫০/- শআ