যশোর পৌরসভার কম্পোস্ট প্লান্টের কাজ শেষ হবে সেপ্টেম্বরে

521

যশোর, ১৪ জুলাই, ২০১৪ (বাসস) : যশোর পৌরসভার উদ্যোগে নির্মিত কম্পোস্ট প্লান্টের কাজ এখন শেষের দিকে। এতে যশোর-নড়াইল সড়কের ঝুমঝুমপুরে এখন আর নাকে রুমাল দিতে হয় না পথযাত্রীদের। অনেকটা স্বস্তিতে চলাচল করছেন তারা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই প্লান্টের কাজ শেষ হলে জানুয়ারি থেকেই উৎপাদিত হবে জৈব সার। এ তথ্য জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝুমঝুমপুর ময়লাখানায় দুর্গন্ধে চলাচল করা যেত না। সে দূর্গন্ধ ছ’মাস আগেই দূর হয়েছে।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, প্রযুক্তি নির্ভর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ঝুমঝুমপুরে ময়লাখানায় পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে পরিবেশবান্ধব ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন হবে জৈব সার, বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ। বর্জ্য থেকে শহরে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় এ জন্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে চালু করা হচ্ছে ঢাকনাযুক্ত কন্টেইনার ডাস্টবিন। এ প্রকল্প চালু হলে শহরের সব আবর্জনা ঢাকনাযুক্ত স্থানে ফেলা হবে। তারপর ওই বর্জ্য নেয়া হবে শহরের ঝুমঝুমপুরের ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থানে।
পৌরসভার কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, শহর পরিষ্কার রাখতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যে ৯০টি কান্টেইনার ডাস্টবিন ব্যবহার করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ১০টি ডাম্পিং ট্রাক ওই স্থান থেকে ময়লা অপসারণ করবে। প্রকল্পের কাজের জন্য একটি বুলডোজার ও একটি এক্সেভেটর ব্যবহার করা হবে।
এ প্রকল্পের জায়গার চারপাশ ১৫-২০ ফুট উঁচু প্রাচীর দেয়ার কাজ চলছে। প্রাচীরের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে কম্পোস্ট প্লান্ট, প্রি-ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বায়োগ্যাস ডাইজেস্টার, কন্ট্রোল ল্যান্ড ফিল সেইভ ও ইন্ট্রিগেট স্যানেটারি ল্যান্ড ফিল সেইভ। পাশাপাশি সেখানে অফিস, স্টাফ কোয়ার্টার, ট্রাক রাখার শেডও নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচটি পুকুর খনন কাজ চলছে। সেখানে ফেলা হবে প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের ডাস্ট। প্রাথমিক পর্যায়ে ময়লা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে ২০ থেকে ৩০ টন বর্জ্য ডাম্পিং হবে।
শুধু যশোর পৌরসভার নয়, ঝিকরগাছা পৌরসভাসহ নিকটবর্তী শহর সংলগ্ন এলাকার বর্জ্যও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে নেয়া হবে। ১০ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে ডাম্পিং করা হবে ৪৫ টন বর্জ্য। প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের আবর্জনা থেকে উৎপাদন করা হবে বিদ্যুৎ। উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ দিয়ে পরিচালনা হবে প্লান্টের নানা কাজ।
এ ছাড়া সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য থেকে উৎপাদন করবে পরিবেশবান্ধব জৈব সার, যা বাজারজাত করা হবে। পাশাপাশি বর্জ্য থেকে উৎপাদিত হবে বায়োগ্যাস। যা পাইপলাইনের মাধ্যমে আশপাশের এলাকার বাসাবাড়িতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ হবে বলেও পরিকল্পনা রয়েছে। ময়লা রাখার জন্যে ঝুমঝুমপুরে ১৩ দশমিক ২৫ একর আয়তনের ময়লা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের নির্মাণ এখন শেষের দিকে।
সহকারী প্রকৌশলী আহসান বারী জানান, ২০১৬ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটি হাতে নেয় যশোর পৌরসভা। এরপর মে মাসে প্রস্তাব পাঠানো হয় এডিবিতে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ব্যয় বেড়ে ৫০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পর মেয়াদ এক বছর থাকলেও পরে তা দু’বছর করা হয়। আর তা শেষ হবার কথা রয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। পরের ছয় মাস চলবে কারিগরি ট্রেনিং। তারপর উৎপাদন শুরু হবে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে।
ময়লা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের নির্মাণকালীন কারিগরি কাজের তদারকিতে রয়েছে ওয়েস্ট কনসার্ন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি ও যশোর পৌরসভা।
সহকারী প্রকৌশলী আহসান বারী আরো জানান, এ প্রকল্পে খান এগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠান সার উৎপাদন করবে। এখান থেকে ছ’মাস আগেই এডিবির মাধ্যমে টেন্ডার হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর তারা এ প্রকল্পে সার উৎপাদনের জন্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু জানান, পৌর নাগরিকরা সুযোগ-সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল। মেয়রের উদ্দেশ্য শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মাদকমুক্ত শহর গড়া, আলোকিত করা ও জলাবদ্ধতা দূর করা। এসব ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়েছেন তিনি। পৌরবাসীর সহযোগিতা পেলে আরও অনেক কাজ করতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন মেয়র।