চট্টগ্রামের কর্মহীন ৩২ হাজার পরিবারে পৌঁছে গেছে জেলা প্রশাসনের খাবার

516

চট্টগ্রাম, ২৮ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটে কর্মহীন হয়ে পড়া চট্টগ্রামের ৩২ হাজার দিনমজুরের পরিবারে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও শুকনো খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরাও এ সহায়তা দিচ্ছেন।
এই কার্যক্রমের জন্য সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ১৭০ মেট্টিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা। চাল ছাড়া অন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ছোট ছোট প্যাকেট করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পৌঁছে দিচ্ছেন।
আজ সকাল থেকে জেলার ১৫টি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারি কমিশনার (ভুমি) নিজ নিজ উপজেলার কর্মহীন দরিদ্র পরিবার গুলোর ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। একাজে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের সহযোগীতা করছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া চট্টগ্রামের দরিদ্র দিনমজুরদের বাড়ি বাড়ি চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামে একজন মানুষও যাতে অভুক্ত না থাকে সে জন্যে কাজ করছে সরকার।
তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে হাটহাজারী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ৭৫০টি পরিবারকে ১০ কেজি চাল এবং ১ কেজি করে ডাল দেয়া হচ্ছে। মিরসরাই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভার ১ হাজার ৩০০ পরিবারকে ১০ কেজি চাল এবং ১ কেজি করে ডাল দেওয়া হচ্ছে। সীতাকু- উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ১ হাজার ২০০ পরিবারকে ১০ কেজি চাল এবং পরিমাণমতো ডাল-আলু দেয়া হয়েছে। ৫০০ পরিবারকে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ৫০০ গ্রাম তেল-পেঁয়াজ ও চিনি এবং চা-দুধ দেয়া হয়েছে।
সন্দ্বীপ উপজেলার ১ হাজার ৫০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল, ১ কেজি ডাল এবং ২ কেজি আলু দেয়া হচ্ছে। ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভার ১ হাজার ৭০০ পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি লবন, ৫০০ গ্রাম তেল এবং একটি সাবান দেয়া হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ২ হাজার পরিবারকে ৫ কেজি চাল এবং ৫০০ গ্রাম ডাল দেয়া হচ্ছে। বোয়ালখালী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ১ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম ডাল-তেল-লবন এবং ১টি সাবান দেয়া হচ্ছে। লোহাগাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ৫০০ গ্রাম তেল এবং চিড়া-মুড়ি দেয়া হচ্ছে। আনোয়ারা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৮০০ পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল-তেল-আলু এবং একটি সাবান দেয়া হচ্ছে। পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ৯০০ পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি আলু পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সাতকানিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার ১ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে যারা বেশি দরিদ্র তাদের আলু-তেল দেয়া হচ্ছে।
এছাড়াও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় ৭০০ পরিবার, বাঁশখালী উপজেলায় ১৪০০ পরিবার এবং কর্ণফুলী উপজেলায় ৩৫০ পরিবারের মাঝে সংশ্লিস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহায়তায় দিনমজুরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জেলা প্রশাসনের দেয়া খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনায়েদ কবীর সোহাগ জানান, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর উদ্যোগে এবং ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তায় রাউজানের ১৪টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় ২০ হাজার পরিবারকে বাড়িতে গিয়ে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রতি পরিবারের জন্য ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ১ লিটার তেল, ১ প্যাকেট বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও যাদের জরুরি ওষুধ প্রয়োজন তাদের ওষুধও দেয়া হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি এবং সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় আরও শুকনো খাবার দিনমজুরদের দেয়ার চেষ্টা চলছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী আছে। ক্রমান্বয়ে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। নগরে সিটি করপোরেশনের সহায়তায় সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সহায়তার জন্য কাউকে ঘর থেকে বের হতে হবেনা। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কর্মহীনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দেবে বলে তিনি জানান।