নড়াইলে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে ভাগ্য বদল

249

॥ শরিফুল ইসলাম ॥
নড়াইল, ২৪ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : জেলায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঋণ নিয়ে ভাগ্য বদল করেছেন অনেকে। কেউ হাঁস-মুরগি পালন, কেউ বা গরু-ছাগল পালন, কেউ মুদি দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন আবার বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরী করছেন বাহারী রঙের জিনিসপত্র। এভাবে জেলার তিনটি উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষ প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রকল্প আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে স্ববলম্বী হয়েছেন।
জানাগেছে, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক সমিতি রয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে ৬০ জন সদস্য রয়েছে এর মধ্যে ৪০ জন মহিলা এবং ২০ জন পুরুষ। প্রতি সদস্য প্রতি সপ্তাহে ৫০ টাকা করে জমা করবে এভাবে দুই বছর জমা করতে হবে। একটি সমিতিতে দুই বছরে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা জমা হবে। এখানে সরকারের পক্ষ থেকে আরো সমপরিমান অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় এবং বিশেষ বরাদ্দ বাবদ আরো অনুদান দেয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ লক্ষটাকা ওই সমিতির সদস্যদের মাধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়। এক বছরের মধ্যে ওই ঋণ পরিষোধ করে আরো বেশি ঋণ নেয়া যায়। সমিতি পরিচালনার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি রয়েছে।
সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের সিমাখালী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন দলের সদস্য পপি খানম বাসস’কে বলেন, আমি ২০১৬ সালে এ সমিতির সদস্য হই। প্রথমে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছাগল পালন শুরু করি। বর্তমানে প্রকল্প থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেয়া আছে। বিভিন্ন সময়ে ছাগল বিক্রী করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছি। এর থেকে গরুও কিনেছি বর্তমানে ৯টি ছোট-বড় ছাগল রয়েছে আমার। এখান থেকে আয়ের টাকা আমার সংসার এবং ছেলের লেখাপড়া খরচ চালিয়ে ভালো আছি। আমার বাড়ি আমার খামার আমার মত অনেকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
সমিতির অপর সদস্য কুলসুম বেগম বাসস’কে বলেন, আমি সমিতি থেকে প্রথমে ১০ হাজার টাকা নিয়ে শাড়ির ব্যবসা শুরু করি। সমিতির ঋণ পরিশোধ করার পর ২০ হাজার টাকা নিয়েছি কাপড়ের ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে ভালো আছি।
ঋষিপাড়া সমিতির সদস্যরা আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ এবং বেতের জিনিস তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। বেত থেকে ধামা, পালা, সের, পোয়ে এবং বাঁশ থেকে চালন, কুলা, ডোল, টোপা, পোলোসহ বিভিন্ন জিসিন তৈরী করে বিভিন্ন হাট বাজারেসহ মেলা বিক্রী করে থাকে। এ থেকে যে লাভ হয় তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল আছেন তারা।
সমিতির সদস্য গৌতম বিশ^াস বলেন, এ খান থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ ও বেত কিনে বিভিন্ন জিনিস তৈরী করি আমরা। আমাদের এখান থেকে খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে বিক্রী করে থাকে। কার্ত্তিক মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্তু প্রায় ৯ মাস আমাদের কাজের খুব বেশি কাজ থাকে। এসময় জিনিস-পত্র বানিয়ে সংরক্ষণ করি এবং সারা বছর ধরে তা বিক্রী করি।
দিপু কুমার বিশ^াস ও তার স্ত্রী উন্নতি রানী বিশ^াস বলেন, আমরা বেতের জিনিস তৈরী করি তা হাট-বাজারসহ বিভিন্ন মেলায় বিক্রী করে থাকি। বেত থেকে আমরা ধামা, পালা, সের, পোয়ে তৈরী করে থাকি যা খরচ বাদে আমাদের প্রতিপিস মালে দুইশত থেকে তিনশত টাকা লাভ হয়। দিনে ৮ থেকে ৯’শ টাকা পর্যন্তু আমাদের লাভ হয়ে থাকে।
গোউর বিশ^াস ও তার স্ত্রী বাসন্তী বিশ^াস বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই এ সমিতির সদস্য এখান থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঋণনিয়ে আমরা বাঁশ কিনে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরী করে হাট-বাজারে বিক্রী করে সংসার চালায় সন্তানকে খেলাপড়া শিখাচ্ছি। ছেলে আকাশ বিশ^াস এবছর এসএসসি পরীক্ষায় দিয়ে পাস করেছে আমরা অনেক ভালো আছি।
পুরস্কার প্রাপ্ত সদস্য বিশ^নাথ দাস বলেন, ২০১৩ সালে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভ্যান-সাইকেল মেরামতের কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ছোট্ট ঘরে কাজ শুরু করেন পরবর্তি বছরে ২০ হাজার করে বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পাকা ভবনে নতুন করে গ্যারেজ শুরু করছেন। এর উপর নির্ভর করে তিনি পরিবারের সংসার খরচ চালিয়ে মেয়েকে এম এ পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন এবং ছোট ছেলে সজিব কুমার দাসকেও লেখাপড়া শিখিয়েছি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছেন বলে জানান বিশ^ নাথ দাস।
আউড়িয়া ইউনিয়নের মাঠ সহকারী আল-হেলাল বাসস’কে বলেন, আমাদের সমিতি সদস্যদের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়। সদস্য তারা তাদের উচ্ছামত প্রতি মাসে বা বছর শেষেও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারে। স্বল্প সুদ যেটা নেয়া হয় তাও তাদের সমিতিতে জমা থাকে। স্বল্প আয়ের এসব মানুষেরা এখন আর এনজিওর ঋণের জালে জড়াতে হচ্ছেনা।
আউড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পলাশ মোল্যা বাসস’কে বলেন, আমার বাড়ি আমার খামার বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এ প্রকল্প থেকে স্বল্পসুদে ঋণ নিয়ে অনেকে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলা সন্বয়কারী ও শাখা ব্যবস্থাপক মিতালী বিশ^াস বাসস’কে বলেন, অন্য সমিতি বা এনজিওরা তাদের ঋণের কিস্তির জন্য অনেক চাপাচাপি করে থাকে আমাদের এখানে সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের সমিতি থেকে ঋণ নিতে এবং জমা দিতে পারে। প্রতিটি সদস্যদের তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা হলে মোবাইলের গোপণ পিন কোডের মাধ্যমে সদস্যরা তাদের টাকা তুলে নেন। কিস্তির কত টাকা তিনি জমা দিচ্ছেন তাও সাথে সাথে মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ কারণে এক জনের টাকা অন্য কারো কাছে যাওয়া বা তুলে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, সদর উপজেলায় ২৫৬ টি সমিতি রয়েছে এর সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার ৪০৬ জন। সমিতির সঞ্চয় রয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৮ টাকা। সরকারি অনুদান ২ কোটি ৮লাখ ৫ হাজার ৭৫৯ টাকা। সমিতির সদস্যদের মাঝে লোন বিতরণ করা হয়েছে ১০ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ৫’শ টাকা।