কুমিল্লায় বিদ্যুৎ বিহীন গ্রামে আলো ছড়াচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ

646

কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১৯ মার্চ, ২০২০ (বাসস): জেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদ সৌরবিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন আলোয় আলোকিত হচ্ছে। কুমিল্লার টিক্কাচর গোমতী নদীর বাধেঁর উপর নির্মিত ব্রীজটিতে রাতে সৌর-বিদ্যুতের বাতিগুলো আলোকিত করছে পুরো সড়ক। এতদিন অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রামীণ জনপদ এখন সৌরবিদ্যুতের আলো জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে। রাতের আঁধারে গ্রাম আলোকিত করছে সৌর বিদ্যুতের আলো।
একটা সময় ছিল যখন রাতে গ্রামের মেঠোপথ মানেই ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। পথ চলতে অন্ধকারে গা শিউরে উঠত। পাড়া-মহল্লা ছিল ভুতুড়ে। সন্ধ্যা লাগলেই রাস্তায় দেখা মিলত না কোন মানুষের। তবে গ্রামের সে চিত্র এখন পাল্টাতে শুরু করেছে। গ্রামের মেঠোপথ, গোরস্থান, মসজিদ, মন্দির, এখন রাতে সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। পৌর এলাকা কিংবা সিটি করপোরেশন নয়, কুমিল্লার গ্রামের অলিগলিতেও এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে সৌরবিদ্যুত। সুফলভোগীরা বলেন, সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন করায় সাধারণ মানুষের জীবনমানে উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতের বিকল্প শক্তি হিসেবে বর্তমান সরকার মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন করায় বিদ্যুতের উপর চাপ ও বিদ্যুতের লোড শেডিং কমেছে। সোলার প্যানেল স্থাপন করায় রাতে পথচারী নির্বিঘ্নে চলাচল করছে।
কুমিল্লার গোমতী বাঁধ সৌর বিদ্যুতে আলোকিত মেঠোপথ গ্রামের মেঠোপথও এখন আলোকিত হচ্ছে সোলার সিস্টেম । গ্রামের মোড় কিংবা ছোট বাজার ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে সৌরবিদ্যুতের আলো। প্রত্যন্ত এলাকায় লাগানো হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সড়কবাতি। রাতের বেলায় সড়কবাতির আলোয় আলোকিত হচ্ছে গোমতী নদী বাঁধের অনেকটা অংশ। শহরতলীর টিক্কাচর গোমতী নদীর বাঁধের উপর ব্রীজটি সৌর বিদ্যুতের আলোতে জ্বলমল করছে। ব্রীজের উপর দু’ধারে সোলার বাতির আলোতে গোমতী বাঁধের উপর নির্মিত টিক্কাচর ও বানাসোয়া ব্রীজের চিত্রই যেন বদলে গেছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সেতু দুই’টি রাতের বেলার সোলারের আলোতে আশপাশের এলাকার চিত্রও বদলে গেছে। ফলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছে টিক্কাচর ও বানাসোয়া ব্রীজের সৌন্দর্য উপভোগে। অনেকেই আলোতে ব্রীজের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছে সেখানে। এছাড়াও প্রতিদিনই নগরীর বাইরের বিভিন্নস্থান ছাড়াও আপনজনদের বাড়িতে আসা অতিথিরা সন্ধ্যার পর গোমতীর বাঁধে ছুটে আসে। কেউ আড্ডায়, কেউবা ছবি তুলে ব্রীজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় সৌর বিদ্যুতের এ সড়কবাতি বসানো হয়। শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এ মানুষগুলোর কাছে রাতে বিদ্যুতের আলো ছিল স্বপ্নের মতো। আগে সন্ধ্যা হলেই নেমে আসত নীরবতা। সন্ধ্যায় কেউ কেউ কুপি জ্বালালেও তা ছিল ক্ষণিকের। কিন্তু দিন পাল্টে দিয়েছে সৌরবিদ্যুৎ। গোমতী বাধঁ এলাকার বাসিন্দারা জানান, টিক্কাচর ব্রীজ থেকে কাপ্তান বাজার পর্যন্ত রাতের বেলায় বিদ্যুৎ না থাকলে আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হতো। সৌর সিস্টেমে সড়কগুলোতে বাতি লাগানোর ফলে এখন আর আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করতে হয় না। টিক্কাচর থেকে কাপ্তাবাজার এলাকার সড়কে আলোতে জ¦লমল করে। কাপ্তান বাজার এলাকার এক অটোভ্যান চালক শরীফ জানান, গোমতীর বাঁধের উপর নির্মিত ব্রীজে সোলার প্যানেল বসায় এখন রাতেও গাড়ী চালাতে পারছেন।
কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল হক বাসস’কে জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুত ও বিদ্যুত সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সারাদেশে গ্রামগঞ্জে সৌর বিদ্যুত প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তার অংশ হিসেবে প্রকল্পটির যাত্রা কুমিল্লাতেও শুরু হয়েছে। এ সৌর বিদ্যুতের কারণে একদিকে বিদ্যুত সাশ্রয়ী হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামে মানুষ অন্ধকার থেকে আলোকিত রাস্তায় রাতে চলাচল করতে পারছে।