মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আগামীকাল

2994

ঢাকা, ১৬ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ ’ উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান মালা শুরু হচ্ছে আগামীকাল।
বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ (১৭ মার্চ) রাত ৮টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজীর মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর ‘মুজিববর্ষ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান মালার মধ্যে থাকছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস ঘিরে কর্মসূচির পাশাপাশি পুরো বছরে বিভিন্ন আয়োজন।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার চলতি বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। মুজিববর্ষ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ শুরু হয়ে মুজিববর্ষের কর্মসূচি চলবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ‘মুজিববর্ষ’ অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বড় পরিসরে জনসমাগম করা হবে না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় অনুষ্ঠান সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী উপলক্ষে বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও জনপরিসরে ক্ষণগণনা শুরু হয়। দেশের ৫৩ জেলা, দুটি উপজেলা, ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর ৮৩টি পয়েন্টে কাউন্টডাউন ঘড়ি বসানো হয়।
এর আগে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে উচ্চপর্যায়ের দুটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০২ সদস্যের জাতীয় উদযাপন কমিটি এবং জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৬১ সদস্যের জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ গঠিত ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন কমিটিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করা হয়।
জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতর পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। এ সব মন্ত্রণালয় ও দফতর জনগণকেও দেবে বিশেষ ধরনের সেবা। সরকার ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিজস্ব কর্মসূচির মাধ্যমে মুজিব বর্ষ পালন করবে। কেন্দ্রীয় তদারকির বাইরেও জেলা উপজেলা প্রশাসন, সরকারি বেসরকারি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
মুজিববর্ষের কর্মসূচি প্রসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জানান, আগামীকাল ১৭ মার্চ রাত ৮টায় রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণের পর পর আতশবাজীর মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাদের বাণী দেবেন।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বড় ধরনের জনসমাগম পরিহার করে সারাদেশে এক সঙ্গে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান দেশের সকল গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো ও ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপন করবে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত এর ৪০ তম সাধারণ পরিষদের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য দুই ঘণ্টা টেলিভিশন অনুষ্ঠান হবে জানিয়ে কামাল চৌধুরী বলেন, সেটা পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে এবং সারা পৃথিবীতে সম্প্রচার করা হবে। এই প্রোগ্রামটার মধ্যে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সেখানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন, পরে কবিতা পাঠের আয়োজন থাকবে।
জাতীয় শিশু দিবসে এই আয়োজনে শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও শিশুদের কণ্ঠে অন্য সঙ্গীত পরিবেশনা থাকবে। একশ দেশীয় শিল্পীর যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশনার পাশাপাশি মুজিববর্ষের জন্য থিম সং বা উৎসব সঙ্গীত পরিবেশিত হবে অনুষ্ঠানে।
উদ্বোধনী আয়োজনের অংশ হিসাবে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, অবদান ও ত্যাগের মহিমা নিয়ে ’চিত্রপটের দৃশ্যকাব্যে বঙ্গবন্ধু’ নামে থিয়েট্রিক্যাল কোরিওগ্রাফির আয়োজন থাকবে। এটি পরিবেশন করবে শিল্পকলা একাডেমি।
যে যেখানে থাকবেন, সেখান থেকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। সেজন্য রাত ৮ টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সকল বেসরকারি টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ও আনলাইন মিডিয়ায় এক যোগে অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী সংসদের বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। ২২ মার্চ অধিবেশনের শুরুর আগে সব সংসদ সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেবেন।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বর্ষব্যাপী এই উদযাপনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৭মার্চ সকাল সাড়ে ৬ টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের সকল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তলিত হবে। সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিবেন। টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, ডা. দীপু মণি এমপি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি ও আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোস, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভেঅকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও আরো অনেকে উপস্থিত থাকবেন।
মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।
এদিকে দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে আজিমপুর এতিমখানা প্রাঙ্গণে অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মাঝে খাবার, বস্ত্র ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহার্য সামগ্রী বিতরণ করা হবে। দুপুর ১টায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বনানী করাইল বস্তিতে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এতিম ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করা হবে।
বাদ আসর রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ দুস্থদের দুঃস্থ মানুষের মাঝে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করবে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর দিন রাত ৮টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মক্ষণ উপলক্ষে সারাদেশে একযোগে আতশবাজি প্রদর্শনী ও ফানুস উত্তোলন করা হবে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, সোরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাজি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে আলোকসজ্জা করা হবে।
এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে রাত ৮ টায় জাতীয় সংসদ ভনের সামনে প্রদীপ প্রজ্বলন করবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। পরে সেখান থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
মুজিববর্ষ পালনের লক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহকে সমন্বিত করে ঢাকাসহ সারা দেশে আলোর মিছিল বের করবে।
ঐদিন বিকেল ৬টায় রাজধানীর কলাবাগান মোড় থেকে কুলোর উপর প্রদীপ জ¦ালিয়ে আলোর মিছিল বের করা হবে এবং তা বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া বছরব্যাপী আলোচনা সভা, গোলটেবিল সংলাপ ইত্যাদির মাধ্যমেও মুজিববর্ষ পালন করবে সংগঠনটি।