শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি : চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ

570

ঢাকা, ১৪ মার্চ ২০২০ (বাসস) : বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ দেখা দিলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। এতে অন্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাসসকে বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন, তাদের কেউ দেশে বসবাসকারি নন, ইতালি থেকে দেশে এসেছেন। তাদের মদ্যে দুইজন ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার দরকার নেই। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে গণভীতি তৈরি হতে পারে।
গ্রীণ লাইন মেডিকেল কলেজের শিশু রোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম বলেন, মানুষ যতটা আতংকিত হয়েছে সেরকম পরিস্থিতি এখনো বাংলাদেশে তৈরি হয়নি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবশ্যকীয় পাঠ ছাড়া এ্যাসেম্বলী বা প্রতিদিনের খেলাধুলা বন্ধ করে দেয়া উচিত । পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতাও বাড়ানো উচিত।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিলকিস বেগম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে সবাইকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে জনমনে আতংক সৃষ্টি হবে। এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবে।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ ইতালি ফেরত তিন প্রবাসীর শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত¦ শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে একজন সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। একজন এখনো করোনা ভাইরাস মুক্ত নন। তবে তার শারীরিক পরিস্থিতির উন্নকি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারিদের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর অস্তিত্ব এখনো পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় প্রতিদিনের এ্যাসেম্বলিতে, ক্লাসরুমে এবং আলাদাভাবে স্কুলের মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এর প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র মনীষ্যিত মাধুর্য্য বাসস প্রতিবেদককে জানায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্কুলে বিশেষ পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে স্কুলের বাথরুমে হ্যান্ড ওয়াশ ছিলোনা। এখন সবগুলো বাথরুমে হ্যান্ড ওয়াশ দেয়া হয়েছে। ক্লাসরুমের টেবিল, চেয়ার এবং বেঞ্চও আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।
নগরীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ফারিয়াল রাইদা আহমেদ জানায়, করোনা প্রতিরোধের জন্য স্কুলে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুইবার স্কুল ধোয়ামোছা করা হতো। এখন দিনে তিনবার ধোয়ামোছা করা হয়। আগে শুধু বড়দের বাথরুমে সাবান থাকতো। এখন সবার বাথরুমে হ্যান্ডওয়াশ দেয়া হয়েছে।
দশম শ্রেণীর ছাত্র ধ্রুপদ রূপবন্ত করে, স্কুলে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিলেও সেটি এতো বেশি প্রভাব ফেলতো না। কিন্তু এখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীরা একে গুরুত্বও বেশি দিচ্ছে।
মাধুর্য্য জানায়, শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে কিভাবে হাত ধুতে হবে, হাঁচি দিতে হবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিভাবে ব্যবহার করবো ইত্যাদি বিষয় দেখিয়েছেন। এছাড়াও বাইরে থেকে এসে এবং খাওয়ার আগে ভালো ভাবে হাত ধোয়া, বাসায় ফিরে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ধ্রুপদ জানায়, প্রতিদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষকরা পর্যবেক্ষণও করছেন। কেউ হাঁচি দিলে, হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি করলে শিক্ষকরা তাদের সতর্ক করছেন। এখন স্কুলের মধ্যে অনেকে মাস্ক পড়ছে।
স্কলাসটিকা স্কুলের মার্চ মাসের হোমরুম থিম ঠিক করা হয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। প্রত্যেক ক্লাশের শিক্ষার্থীদের সাথে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রতিরোধে কি করতে হবে তা আলোচনা করা হয়। স্কলাসটিকা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী বর্ণিল মূর্চ্ছনা জানায়, জনবহুল স্থান এড়িয়ে চলতে বলেছে। কারো খুব কাছাকাছি যেতে নিষেধ করেছে। স্কুলের এ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দিয়েছে।
ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এর সেক্রেটারি ডা. রকিবুল ইসলাম দেশব্যাপি করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কেন্দ্র এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাগুলো সাধারণ মানুষ মানছে কিনা এব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের তদারকি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের গাইনী এ্যান্ড অবস-এর সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ বিলকিস বেগম গর্ভবর্তী নারীদের বর্তমান সময়ে আরো বেশি সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন। তিনি গর্ভবতী নারীদের সামান্য ঠান্ডা-জ¦রেও করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীর বাসায় এসে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।
নিধু স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জাকিয়া সানজিদা বলেন, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বাচ্চাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তারা এসব নিয়ম মানছে কিনা তাও দেখি।