এখন থেকে দেশে উৎপাদিত ফল-মূলসহ কৃষিজাত পণ্য সহজেই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে

420

ঢাকা, ১২ জুলাই,২০১৮ (বাসস) : ঋতুভিত্তিক উৎপাদিত শাক-সবজি, ফল-মূল ও প্রাণিজ খাদ্যচক্রের কাঁচামাল সংরক্ষণের কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের গবেষকরা সিরডাপের সাথে যৌথ গবেষণা চালিয়ে ‘মাল্টি কমিডিটি সোলার টানেল ড্রায়ার প্ল্যান্ট’ শীর্ষক এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
এর ফলে বিভিন্ন মৌসুমে দেশে উৎপাদিত ফল-মূলসহ কৃষিজাত পণ্য সহজেই দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু আজ বৃহস্পতিবার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (এনএফই) আয়োজিত ‘এনএফই ক্যারিয়ার এক্সপো-২০১৮’ এবং ‘মাল্টি কমিডিটি সোলার টানেল ড্রায়ার প্লান্ট’ শীর্ষক প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন।
সাভারের দত্তপাড়ায় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআরবি’র সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোঃ বেলাল হোসেন বক্তৃতা করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে প্রণীত জাতীয় শিল্পনীতিতে কৃষি/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী শিল্পকে উচ্চ অগ্রাধিকার খাতের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যখাতের উন্নয়নে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
এখাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, এরফলে দেশে দ্রুত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাত বিকশিত হচ্ছে। বর্তমানে ১৪০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন,বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে । ২০১৪ সালে বিশ্ববাজারে হালাল খাদ্যের চাহিদার পরিমাণ ছিল ৭৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সাল নাগাদ এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। হালাল খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে এনেছে।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশিল্পের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তিনি দেশেই আধুনিক প্রযুক্তির খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
আমু বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় আড়াই শ’ উন্নতমানের মাঝারি খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও এগুলোতে দক্ষ কারিগরি জনবল এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। তিনি বলেন,‘আমাদের গ্রাজুয়েটরা চাকরি খুঁজে না পেলেও দেশিয় শিল্প কারখানাগুলোকে বিদেশি কারিগরি জনবলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ প্রবণতা ঠেকাতে তিনি কার্যকর ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ স্থাপনের পরামর্শ দেন।
তিনি দেশের শিল্প কারখানায় যে ধরনের দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সে ধরনের জনবল তৈরির উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের প্রযুক্তি মাল্টি-কমিডিটি সোলার টানেল ড্রায়ার প্লান্ট উদ্ভাবনের ফলে পঁচনশীল কৃষিপণ্য সংরক্ষণ সহজ হবে। এর মাধ্যমে কৃষক, ক্রেতা-ভোক্তা, কৃষি শিল্প উদ্যোক্তা, নীতি নির্ধারকসহ সকলেই উপকৃত হবে। এটি দেশিয় খাদ্যশিল্পের আধুনিকায়ন, গুণগতপরিবর্তন ও উৎপাদিত পণ্যে মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ উদ্ভাবন তরুণ প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে শিল্প সহায়ক ও পরিবেশবান্ধব নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।