ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

491

মস্কো (রাশিয়া), ১২ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো ক্রোয়েশিয়া। গতরাতে ১৯৬৬ আসরের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ২১তম বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করে ক্রোয়েশিয়া। পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জয়ের স্বাদ নেন মড্রিচ-রাকিটিচরা। আগামী ১৫ জুলাই মস্কোতে ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামবে ক্রোয়েশিয়া।
মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থেকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। এছাড়া এবারের আসরে দু’দলের পারফরমেন্সও ছিলো সমান-সমান। তাই শেষ চারের লড়াইয়ে ফেভারিটের তকমাটা এককভাবে গায়ে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া কোন দলের গায়েই ছিলনা।
তবে ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষন পরই গোল আদায় করে ম্যাচের লাগাম টেনে নেয় ইংল্যান্ড। ৫ মিনিটে নিজেদের বক্সের বাইরে ইংল্যান্ডের ডেলে আলিকে ফাউল করেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মড্রিচ। ফলে ফ্রি-কিক পায় ইংল্যান্ড। ক্রোয়েশিয়ার গোলবারের ২০ গজ দূর থেকে ফ্রি-কিক নিতে আসেন ডিফেন্ডার কিয়েরান ট্রিপায়ার। আর ঐ ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত এক শটে গোল আদায় করে নেন ট্রিপায়ার। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ইংলিশরা।
লিড নিয়েও গোলের ব্যবধান বাড়ানোর জন্য অস্থির ছিলো ইংল্যান্ড। পরের ১৪ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার সীমানায় তিনবার আক্রমন করার চেষ্টা করে ইংলিশরা। তবে সফল হয়নি।
প্রতিপক্ষের আক্রমনগুলো সামলে ১৯ মিনিটে ম্যাচে নিজেদের প্রথম আক্রমন করে ক্রোয়েশিয়া। মড্রিচের বাড়ানো পাস থেকে ইংল্যান্ডের বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন মিডফিল্ডার ইভান পেরিসিচ। কিন্তু শট গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়।
এরপর ২২ ও ২৯ মিনিটে দু’টি আক্রমন করে ইংল্যান্ড। দু’টিতে আক্রমনের নায়ক ছিলেন ইংলিশদের অধিনায়ক হ্যারি কেন। কিন্তু তার ভুলে গোলের স্বাদ নিতে পারেনি ইংল্যান্ড।
তবে ৩১ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সবচেয়ে ভালো সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। মড্রিচের যোগান দেয়া বল ইংল্যান্ডের বক্সের ভেতর পেয়ে যান স্ট্রাইকার এ্যান্টে রেবিচ। গোলমুখে শটও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার শট দৃঢ়তার সাথেই রুখে দেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। ফলে ম্যাচে ফেরা হয়নি ক্রোয়েশিয়ার। শেষ পর্যন্ত চালকের আসনে বসে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ করে ইংল্যান্ড। অবশ্য বল দখলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে দু’দল। তবে এক্ষেত্রে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে ছিলো ক্রোয়েশিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১০ মিনিট দু’দলের খেলাই ছিল বেশ অগোছালো। বল দখলে নিয়ে আক্রমন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে উভয়েই। তবে দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম আক্রমন করে ইংল্যান্ড। ৫৬ মিনিটে মিডফিল্ডার রাহিম স্টারলিং বল যোগান দিয়েছিলেন মধ্যমাঠের আরেক খেলোয়াড় জেসে লিংগার্ডকে। বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখে শট নিলেও তা রুখে দেন প্রতিপক্ষের রক্ষন ভাগ।
এরপর ৬৭ মিনিটে অধিনায়ক কেনের ভুলে আবারো গোল বঞ্চিত হয় ইংল্যান্ড। প্রতিপক্ষের আক্রমন নসাৎ করে দিয়ে এক মিনিট পরই পাল্টা আক্রমন করেই বাজিমাত করে ক্রোয়েশিয়া। ডিফেন্ডার সিমে ভার্সালিকোর ক্রসের বল লাফিয়ে উঠে হাওয়ায় ভেসে বাঁ-পায়ের আলতো ছোঁয়ায় গোল করেন ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার পেরিসিচ(১-১)।
ম্যাচে সমতা এনে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় ক্রোয়েশিয়া। তাই ইংল্যান্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করে খেলতে থাকে তারা। এতে কোনঠাসা হয়ে রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। নির্ধারিত সময়ের শেষ ১৫ মিনিট বেশক’টি আক্রমন করে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু স্ট্রাইকারদের ভুলের সাথে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিকফোর্ডেও দৃঢ়তায় সেই আক্রমনগুলো গোলে পরিণত হতে পারেনি। তাই ১-১ সমতায় শেষ হয় ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট। এতে ম্যাচটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটও গোল করতে ব্যর্থ হয় দুই দল। তবে গোল পেতে-পেতে পেলো না ইংলিশরা। ৯৯ মিনিটে ট্রিপায়ারের ক্রস থেকে ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখে হেড নিয়েছিলেন ডিফেন্ডার জন স্টোনস। তার হেডে বল যাচ্ছিলো ক্রোয়েশিয়ার গোলমুখে, তবে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ডিফেন্ডার ভার্সালিকো হেডে বলকে সরিয়ে দিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন। ফলে এই অর্ধও ১-১ সমতায় শেষ হয়।
তবে অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে ফেলে ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ১০৯ মিনিটে ডিফেন্ডার জোসিপ পিভারিচ ইংল্যান্ডের বিপদ সীমানায় বল পাঠিয়েছিলেন সেটি ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকার। কিন্তু সেটি উঠে যায় আকাশে। উপর থেকে আসা বলে হেডে দিয়ে ইংল্যান্ডের বক্সের মধ্যে পাঠিয়ে দেন পেরিসিচ। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্রাইকার মারিও মান্দজুকিচ নিয়ন্ত্রন নিয়ে বলকে জালে পাঠালে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়েশিয়া। পাশাপাশি প্রথমবারের মত ফাইনালে ওঠার কীর্তি গড়ে জøাটকো ডেলিচের শিষ্যরা।