বাসস দেশ-২১ : চলতি বছরের মধ্যেই ৭টি অভিন্ন নদীর চুক্তি চূড়ান্ত করার আশা করছে ভারত

381

বাসস দেশ-২১
বাংলাদেশ-ভারত-নদী
চলতি বছরের মধ্যেই ৭টি অভিন্ন নদীর চুক্তি চূড়ান্ত করার আশা করছে ভারত
ঢাকা, ২ মার্চ, ২০২০ (বাসস) : ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ তিস্তা বাদে সাতটি অভিন্ন নদী নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে আশা করছে নয়াদিল্লী।
আমাদের এই সাতটি নদীর পানি প্রবাহের তথ্য সমন্বয় করা দরকার, যাতে যত দ্রুত সম্ভব পানি বন্টন চূড়ান্ত করা যায়… সম্ভব হলে এ বছরের মধ্যেই। তিনি ঢাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসাবে এ কথা বলেন।
তিস্তা নদীর পানি বন্টনের চুক্তি বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিশেষ নদীর পানি বন্টনে একটি চুক্তি কেবল মাত্র সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতৈক্যের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করা যেতে পারে।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করা শ্রিংলা অবশ্য বলেন, চুক্তির প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে কাজ করছে ভারত।
তিনি বলেন, আমরা জানি সীমান্তের উভয় পাশেই এটি একটি আবেগময় বিষয়… তবে আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতির কোন কমতি নেই। তিনি আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভীর সভাপতিত্বে এ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
গত আগস্টে বাংলাদেশ ও ভারত সাতটি অভিন্ন নদী- মনু, মুহুরী, খোয়াই, গুমতি, ধরলা, ফেনী ও দুধকুমার নিয়ে একটি কাঠামো বা অন্তঃবর্তী পানি বন্টন চুক্তি তৈরির ব্যাপারে ঐকমত্য হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আজ দুই দিনের সফরে সকালে ঢাকায় পৌঁছেন। তিনি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রেটিজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস) এবং ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডিয়া : এ প্রমিজিং ফিউচার’ শীর্ষক এক সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস এবং বিআইএসএস চেয়ারম্যান ফজলুল করিম।
অভিন্ন নদীগুলোর প্রতিটির ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে অগ্রগতির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই স্বীকার করে উল্লেখ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে পানি বন্টনের ব্যাপারে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে পুনঃরায় আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আমাদের বন্ধুদের এখানে আশ্বস্ত করছি যে আমরা শুষ্ক মৌসুমে ন্যায্যভাবে পানি বন্টনে সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শ্রিংলা বলেন, ৫৪ টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিকে সুষ্ঠু ও পরিবেশগতভাবে টেকসই উপায়ে বন্টন ব্যবস্থা দুটি দেশের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ।
শ্রিংলা পুনরায় আশ্বস্ত করে বলেন, এনআরসি এবং সিএএ ইস্যু বাংলাদেশের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, এনআরসি ভারতের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা আপনাদেরকে আশ্বস্ত করছি, এর প্রভাব অন্য দেশের ওপর পড়বে না।
দু’দেশের সীমান্তরক্ষীরা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে সম্মত হবার পরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা এই হত্যাকান্ডকে ক্রস-বর্ডার অপরাধ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা দু’দেশরই সমান সংখ্যক। তবে তিনি সীমান্ত হত্যাকান্ডের বিষয়টি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সীমান্ত নিরাপদ রাখা এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করা দু’দেশের সীমান্ত রক্ষীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তিনি আরো বলেন, সীমান্তে প্রতিটি হত্যাকান্ডই এক-একটি সমস্যা ।
শ্রিংলা সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, জিরো অপরাধ কর্মকান্ড পরিবেশ, আরো সহযোগিতা, যৌথ টহল জোরদার এবং অভিন্ন সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ও সীমান্ত হত্যাকান্ড জিরো পযার্য়ে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে শ্রিংলা বলেন, এটি একটি বড় ধরনের মানবিক সমস্যা এবং এ বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোন ভিন্নমত নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশই ভারতের প্রকৃত প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ফলে রোহিঙ্গা সংকটের যে কোন পরাস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানের ক্ষেত্রে পূর্ণ সমথর্ন প্রদানে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শ্রিংলা বলেন, যতশিগগির সম্ভব, রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাসভূমিতে নিরাপদে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের এই ফিরে যাওয়া নিরাপদ ও টেকসই হতে হবে।
শ্রীংলা বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে মানবতার পরিচয় দিয়েছে, ভারত তার প্রশংসা করে।
তিনি বলেন, আমরা আইডিপি শিবির বন্ধের গুরুত্ব, আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ প্রশ্নে সকল পযার্য়ে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। এ ছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরে যাবার পরিবেশ সৃষ্টির কথাও বলেছি।
তিনি বলেন, এ মাসে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর বাংলাদেশের জন্য ভারতের দৃঢ় সদিচ্ছা, আস্থা ও সম্মান দেখানোরই পরিচয় বহন করে।
তিনি বলেন, আমরা এই সফরের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করছি, কারণ বঙ্গবন্ধু বিশ্বব্যাপী যেমন একজন লৌহমানব হিসাবে স্বীকৃত, ঠিক তেমনি একজন আইকন এবং তিনি বাংলাদেশের ও এই উপমহাদেশের জন্য স্বাধীনতার আইকনিক প্রতীক।
তিনি বলেন, ভারতে তার নামের একটি বিশেষ মাহাত্ম রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ভারতে একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও বরণীয় ব্যক্তি হিসাবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা দু’দিনের সফরে আজ সকালে ঢাকা আগমন করলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
বাসস/টিএ/এআর/অনু-এসই-অমি/২২২২/এইচএন