বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : উন্নত বীমা সেবা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

132

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বীমা দিবস ভাষণ
উন্নত বীমা সেবা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাড়ি যারা ব্যবহার করে তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির ইন্সুরেন্সটা সঠিকভাবে করে নাই। থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স, সামান্য কিছু টাকা দিলেই সার্টিফিকেটটা পেয়ে যায় এবং গাড়ি চালাতে পারে। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন কিন্তু আর কিছুই পায়না।
শেখ হাসিনা বলেন, কারো গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে সে যে টাকা পেতে পারে বা ইন্স্যুরেন্সের টাকায় গাড়ি মেরামত করাতে পারে, সে বিষয়টা মানুষকে আরো ব্যাপকভাবে জানানো দরকার।
তিনি তাঁর নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘কেউ যদি আপনাকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে তাহলে তার ইন্সুরেন্স থেকেই আপনার জরিমানার টাকা পাওয়া দরকার। যদিও এই সিষ্টেমটা আমাদের দেশে এখনও শক্তিশালীভাবে গড়ে উঠে নাই। আমি মনে করি এটা গড়ে ওঠা দরকার।’
তিনি বীমা কেম্পানীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বীমা করলে মানুষ যে সুবিধাগুলো পাবে সেগুলো মানুষের কাছে আরো ব্যাপভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে।’
এক্ষেত্রে তাঁর সরকারের কৃষকদের জন্য কৃষি বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, রেল যাত্রীদের জন্য বীমা এমনকি ভবনের জন্য বীমা করার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের লেখাপড়া চালানো এবং সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিতের জন্য শিশুর জন্মের পরপরই তাদের নামে একটি করে বীমা এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্যও বীমা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা মালিকদের প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ চালুর বিষয়টি তাঁর সরকার পরিকল্পনায় রেখেছে।
তিনি এ সময় স্বাধীনতার পর পাটের গুদামে ঘন ঘন আগ্নিকান্ডের উদাহরণ টেনে বীমার টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য একে ‘এক ধরনের ষড়যন্ত্র’ ছিল মর্র্মে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁর সরকার গঠনের পর ঘন ঘন গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লাগার বিষয়টিকেও ‘ক্ষেত্র বিশেষে এই একই কারণে সৃষ্ট’ বলেও উল্লেখ করেন।
‘আমি তদন্ত শুরু করলাম এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে লাগালাম যে কেন, কিভাবে কিসের জন্য অগ্নিকান্ড ঘটছে বা ফেইক কি না, সে সময় কিছু কিছু ঘটনা ধরাও পড়লো। আর কিছু কিছু লোককে আমি নিজেই ধরে ফেললাম’ বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি নাম বলতে চাইনা। কিন্তু আমার যেহেতু বলার অধিকার আছে তাই বললাম।’
শেখ হাসিনা বীমা কোম্পানীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের যারা পর্যবেক্ষক হবেন বা ঘটনার ইন্সপেকশনে যারা যাবেন তাদেরকে ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সৎ লোক হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরা বীমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়ামটা যাতে সঠিকভাবে দেয় সেটাও যেমন প্রয়োজন, বীমার টাকা যেন পায় এবং সঠিকভাবে পায় সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। যতটুকু ক্ষতি ততটুকুই যেন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। ফাঁকি দিয়ে নেয়ার প্রবণতাটাও দূর করতে হবে।’
বীমা করে অর্থ উপার্জনটা এক সময় মধ্যবিত্ত এবং চাকরি প্রত্যাশীদের ভাল উপার্জনের একটি পথ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা এখন আর তেমনভাবে নেই। আমি মনে করি এটা আবার ফিরে আসা উচিত।
তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের বেকার সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বীমা কোম্পানীর মালিক যারা রয়েছেন তারা যদি এজেন্ট হিসেবে কাজ দেন তাহলে অনেক যুবক এবং বিশেষ করে মেয়েরা কাজ করতে পারে ফলে কর্মংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব দূর হবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নে যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ প্রহণ করেছিলেন তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেন।
সরকার প্রধান বলেন, স্বাধীনতার পর বীমা শিল্পকে অধিকতর অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু’র সরকার ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২’ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বীমা কোম্পানিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে সুরমা, রূপসা, তিস্তা এবং কর্ণফুলি নামক ৪টি বীমা কর্পোরেশন গঠন করেছিলেন এবং একই সাথে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় বীমা কর্পোরেশন’ গঠন করেন।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে দেশের বীমা শিল্পের উন্নয়নে ‘ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন আইন-১৯৭৩’ প্রণয়ন করে এই ৪টি কর্পোরেশনকে ভেঙ্গে লাইফ বীমা সেবা প্রদানের জন্য ‘জীবন বীমা কর্পোরেশন’ নামে এবং নন-লাইফ বীমার ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’ নামে দু’টি পৃথক বীমা কর্পোরেশন গঠন করা হয়।
এ দু’টি কর্পোরেশন এখনও দেশে বীমা ব্যবসা তদারকির মাধ্যমে দেশের জনগণকে বীমা সেবা দিয়ে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭৩ সালে একটি স্বায়ত্বশাসিত বীমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমিও প্রতিষ্ঠা করেন জাতির পিতা।
জাতির পিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, এই বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রসংগ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে পহেলা মার্চ, কাজেই মুজিববর্ষে আমি সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এটুকু বলবো- আসুন সকলে মিলে সে প্রত্যয় ব্যক্ত করি যে, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬০০/এমএসআই