রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কাউকে অনিয়ম, দুর্নীতি করতে দেয়া হবে না : তথ্যমন্ত্রী

352

ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কেউ অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অনাচার করতে পারবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল ২০৪১ সাল নাগাদ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ সভায় অমুমোদন দিয়েছেন। শুধু দেশের উন্নয়ন নয়, দেশের মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (বিএফইউজে)-র মহাসচিব শাবান মাহমুদ রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর সারা জীবন’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
ড. হাছান বলেন, দেশকে পরিশুদ্ধ করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। কেউ রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ফায়দা লুটবে সেটি হতে দেয়া হবে না। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের বাংলাদেশ কল্পনা করেছিলেন সেই বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই কারণেই অভিনন্দন জানাই, দেশবাসীরও অভিনন্দন জানানো উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ, তিনি (শেখ হাসিনা) কে কোন দলের, কে কোন পথের, কে কোন মতের এটি না দেখে যারা দুস্কৃতিকারী, মুনাফাখোর, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের মধ্যে কিছু সুযোগসন্ধানী ঢুকেছে, যারা রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চায়। মঙ্গলবার পুরান ঢাকায় যাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, এরা অনুপ্রবেশকারী ছাড়া অন্য কিছু নয়, যদিও তাদেরকে বহু আগেই বহিস্কার করা হয়েছে। আমাদের এসমস্ত সুযোগসন্ধানীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
বিএনপি প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘দেশ আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারতো, যদি সবকিছুতেই না বলার বাতিকটা বিএনপি-জামাত পরিহার করতে পারতো। সবকিছুতে না বলা, সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যাটাকে সত্য হিসেবে পরিবেশন করা, এই যে কাজ প্রতিনিয়ত তারা করে যাচ্ছেন, তা বিস্ময়কর।’
‘দেশের মানুষকে সরকার জিম্মি করে রেখেছে’ বিএনপির এই বক্তব্য উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলার, সেটি এখন ২০০০ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষকে বিভিন্ন সময় তারা জিম্মি করেছে। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে জিম্মি করেছে। শুধু তাই নয়, জিম্মি করে দিনের পর দিন অবরোধ ডেকে মানুষের ওপর আবার পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেছে। রাজনীতির নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা এই ভয়াবহতা পৃথিবীর কোনো দেশে সমসাময়িক কালে ঘটে নাই। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে, ক্ষমতা যাওয়ার জন্য কিংবা তাদের নেতা-নেত্রীকে মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এ ধরণের সহিংসতা বিএনপি করেছে।
তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, অন্ধের মতো সমালোচনা না করে দেশের উন্নয়নে গঠনমুলক সমালোচনা করুন। নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে সরকারকে সহায়তা করুন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকবে, সমালোচনা থাকবে, আমাদের ভুল হতে পারে, পৃথিবীর কোনো সরকার শতভাগ নির্ভুলভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে না। অনুরোধ করবো বিরোধী দল সংসদে এবং সংসদের বাইরে গঠনমুলক সমালোচনা করবে।
ডা. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পুরনের ক্ষেত্রে বহুদূর এগিয়ে গেছে। গত ১১ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশ। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা অর্থনীতি, সামাজিক, মানবিক সুচকসহ সব সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি বহু বছর আগে। এমনকি কিছু সামাজিক সূচকে ভারতের চেয়েও এগিয়ে। এটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার হাত ধরেই হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালি স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুধু দেশের স্বাধীনতা এসেছিল তা নয়, বঙ্গবন্ধু দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বলতেন তিনি বাংলাদেশকে জাপানের মতো একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তুলবেন। বঙ্গবন্ধুকে যে বছর হত্যা করা হয় সেই বছর বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
হাছান মাহমুদ বলেন, যারা বাংলাদেশকে চায়নি তারা দেশী-বিদেশী চক্রান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে হত্যা নয়, শুধু শহীদদেরকে হত্যা করা হয়েছে তা নয়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের অপচেষ্টা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়। দেশের অভ্যান্তরীণ প্রতিরোধের কারণে সেদিন তারা সেটি করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগে উন্নত দেশের খাতায় নাম লেখাতে পারত।
প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর যে বই আজকে শাবান মাহমুদ লিখেছেন, সেজন্য তাকে অভিনন্দন। বঙ্গবন্ধু যেই স্বপ্নের বাংলাদেশ কল্পনা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি অনুরোধ জানাবো দেশকে গঠন করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।’
প্রকাশক ইকবাল হোসেন সানুর সভাপতিত্বে ও ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ডিবিসি২৪ টিভি’র চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম, গ্রন্থকার শাবান মাহমুদ, সাংবাদিক দাউদভুইয়া এবং বিএফইউজের দপ্তর সম্পাদক বরুন ভৌমিক নয়ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।