বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ইসলামের শিক্ষাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

152

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-হজ কার্যক্রম উদ্বোধন
ইসলামের শিক্ষাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

দেশের হজ ব্যবস্থাপনায় অতীতের বিশৃঙ্খল অবস্থার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ১৯৮৪ সালে প্রথম ওমরাহ এবং পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে হজ পালনের সময় থেকেই হজযাত্রীদের সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন। তখন প্রধানমন্ত্রী না হলেও সৌদি বাদশাহ্র রাষ্ট্রীয় প্রটোকল পেতেন। তিনি মিনাতে নিজে দেশের হাজি ক্যাম্পগুলো ঘুরে ঘুরে সমস্যা চিহ্নিত করে সৌদি বাদশাহকে অবহিত করার মাধ্যম সেসব দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
’৯৬ সালে সরকারে আসার পরই আওয়ামী লীগ সরকারিভাবে হাজিদের সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেয় এবং এসব কাজে সৌদি সরকারও সর্বত সহযোগিতা করে এবং হাজিদের সুবিধার জন্য তারা অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারই দেশে ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনা, হজযাত্রী পরিবহন, মক্কা-মদিনায় আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবাসহ সকল ক্ষেত্রে পূর্বের সরকারগুলোর সময়কার যাবতীয় অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধিসহ হজব্রতপালন যেমন সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির আওতায় এসেছে, তেমনি প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালেই তাঁর সরকার হজ উইং এর অফিস জেদ্দা থেকে মক্কাস্থ বাংলাদেশ হজ মিশনে স্থানান্তর করে। যেহেতু হজের সকল কার্যক্রম মক্কা থেকেই পরিচালিত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ সিদ্ধান্তের ফলে গত নয় বছরে হজ ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের সেবা প্রদান অনেক সহজতর ও উন্নততর হয়েছে এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছে।’
হজ বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল এবং হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী মোবাইল অ্যাপ্স প্রস্তুত করা, অনলাইন সুবিধা ব্যবহার করে সারাবছর জুড়ে হজযাত্রীদের জন্য হজের প্রাক-নিবন্ধন এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্নের ব্যবস্থাসহ হজযাত্রীদের পাসপোর্ট, ভিসা, আবাসন, মেডিকেল সুবিধা, সৌদি আরব গমন, প্রত্যাগমন ইত্যাদি বিষয়ে নানাবিধ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের সুবিধার্থে আমরাই প্রথম ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেদ্দা হজ টার্মিনালে প্লাজা ভাড়া করছি।’
তিনি বলেন, হজযাত্রীদের চিকিৎসা সেবাসহ নানামূখী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় হজ প্রশাসনিক দল, হজ চিকিৎসক দল, হজ সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবক দল এবং আইটি টিম রয়েছে।
বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে অতীতের অনিয়মকে দূর করাসহ বাংলাদেশ বিমানের বহরে নতুন ছয়টি উড়ো জাহাজ যোগ করে এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় তাদের সফর স্বস্তিদায়ক হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
‘এদেশে আওয়ামী লীগ সব সময় ইসলামের খেদমতে নিবেদিত,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে এদেশে ইসলামের প্রসারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের ফলে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের দোড়গোঁড়ায় ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকারই প্রথম সরকারি পর্যায়ে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, মসজিদের ইমামগণকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কুরআনের শিক্ষা প্রচারের উদ্দেশ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২২ শত ৭২ কোটি ৪ লক্ষ টাকায় উন্নীত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সারাদেশের সকল উপজেলা পর্যায়ে মডেল মসজিদ কাম ইলামিক সেন্টার নির্মাণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৮৭২২ দশমিক ০৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে ৮০ শতাংশ জায়গাও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, এসব মসজিদ নির্মিত হলে সেখানে নামাজ ছাড়াও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রম, হেফজখানা, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরী, হজ্জযাত্রীদের প্রশিক্ষণ ও লাশ গোসলের ব্যবস্থা থাকবে।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৪১০/আরজি