বাজিস-৩ : ভোলায় ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায়

164

বাজিস-৩
ভোলা-হাসপাতাল-উদ্বোধন
ভোলায় ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায়
ভোলা, ১১ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : জেলা সদরের ২৫০ শয্যার নব-নির্মিত হাসপাতাল ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে বর্তমানে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২ হাজার স্কায়ার ফিট এলাকায় নির্মিত ভবনটি আগামী আগষ্ট মাসে হাসপাতাল কতৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা রয়েছে নতুন এ সরকারি হাসপাতালটি। গণপূর্ত বিভাগের বাস্তবায়নে অত্যাধুনিক ডিজাইনের ৭তলা ভবনটিতে সার্বক্ষণিক দুইটি লিফটসহ আইসিউ, সিসিইউ, ডায়গনস্টিক সেন্টার, রেডিওলজি ডিপার্টমেন্ট, অপারেশন থিয়েটার, কনফারেন্স রুমসহ আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। আর এতে করে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পূরণ ও জেলার স্বাস্থ্য সেবায় আমুল পরিবর্তন আসবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে ১’শ শয্যার কার্যক্রম চলছে। এতে করে মারাত্বক ভোগান্তি পোহাতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। চাহিদার তুলনায় বিছানা সংখ্যা সল্প হওয়াতে অনেক সময় বারান্দায় রোগীদের আশ্রয় নিতে হয়। একইসাথে ডাক্তার সংকটে সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। বিচ্ছিন্ন জেলা হওয়াতে রোগীকে সাথে সাথে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল বা ঢাকা নেওয়া সম্ভব হয়না। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নদী পথে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই নতুন আড়াই’শ বেডের হাসপাতাল ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে জেলার স্বাস্থ্য খাতে আমুল পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম খান বাসস’কে বলেন, ভবনটি নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৯ তলা ফাউন্ডেশনের ভবনটিতে বর্তমানে ৭ তলা নির্মিত হলেও পরবর্তিতে আরো ২তলা পর্যন্ত করা যাবে। ২০১৩ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী নতুন ভবনটি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শতভাগ গুণগত মান বজায় রখেইে ভবনটির কাজ চলছে। তিনি বলেন, বর্তমানে শেষ পর্যায়ের রং ও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। আগামী আগষ্ট মাসে ভবনটি হাসপাতাল কতৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, ভবনটির প্রথম ফ্লোরে রেডিওলজী ডিপার্টমেন্ট, ইমারজেন্সি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার থাকছে। দ্বিতীয় ফ্লোরে ডায়গনিস্টিক বিভাগ ও ডাক্তারদের জন্য রুম থাকবে ১৪টি। তৃতীয় তলায় আপারেশন থিয়েটার ৪টি, এডমিন ব্লক ও আইসিউ থাকছে ৬ বেডের। চতুর্থ তলায় থাকবে অপারেশন থিয়েটার ১টি, পোস্ট ওটি ১২টি, লেবার রুম ১৬টি, রোগীদের ২৮বেড ও কনফারেন্স রুম থাকবে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ফ্লোরে থাকবে রোগীদের জন্য ১৪০টি বিছানা। আর সপ্তম তলায় হবে ২৮টি কেবিন। এছাড়া হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ডাক্তারদের জন্য ৩তলা একটি ডরমেটরি ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ডাক্তারা এখানে থাকতে শুরু করেছেন।
সিভিল সার্জন ডা: রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বাসস’কে জানান, ভোলা সদর হাসপাতাল বর্তমানে ১’শ শয্যা বিশিষ্ট। মূলত এটি ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত। ২২টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে বর্তমানে ১১ জন চিকিৎসক পদায়ন আছে। দৈনিক ধারন ক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করে। অল্প চিকিৎসক দিয়ে এ বিপুল মানুষের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই নির্ধারিত সময়ে ভনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে এটি উদ্বোধন ও আড়াই’শ বেডের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
সিভিল সার্জন আরো বলেন, নতুন আড়াই’শ শয্যার হাসপাতালে কনসাল্টেন্টসহ অন্যন্য চিকিৎসকের পদ অনেক বেশি। এখানে কার্ডোলজী, অর্থোপেটিক্স, চক্ষু, নাক-কান-গলা, গাইনী, মেডিসিন ইউনিটসহ সব কিছুই থাকবে। তাই হাসপাতালটি চালু হলে এখানকার চিকিৎসার মান উন্নয়ন ও রোগীদের স্বাস্থ্য সেবার নতুন দীগন্ত সূচিত হবে বলে মনে করেন সিভিল সার্জন।
এদিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতাল উদ্বোধনের খবরে আনন্দ ও উচ্ছাস প্রকাশ করেছে জেলার সর্বস্তরের জনগণ। এর মাধ্যমে জেলার স্বাস্থ্য সেবায় নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন সাধারন মানুষ। এজন্য তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
শহরে কালীবাড়ি সড়কের বাসিন্দা ঠিকাদার কাজি আরিফুল আলম বলেন, ভোলায় বিগত দিনে উন্নত চিকিৎসা ছিলো অনেকটা স্বপ্নের মত। বর্তমান মহাজোট সরকার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিয়েছেন। নতুন হাসপাতালে চিকিৎসকের অনেক বেশি পদ থাকায় ডাক্তার সংকট কেটে গিয়ে দুর্ভোগ কমে যাবে। ফলে দূর-দূরান্তে গিয়ে মানুষের আর চিকিৎসা করানো লাগবে না। এতে করে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে।
উপজেলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের ব্যবসায়ী লোকমান ফরাজী ও কাশেম আলী মনে করেন, নতুন হাসপাতাল চালু হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী। কারণ তাদের পক্ষে বরিশাল বা ঢাকা গিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। তাই গরিবের জন্য আর্শিবাদ হবে নতুন হাসপাতাল।
বাসস/এইচ এ এম/কেইউ/১২০১/নূসী