সৌন্দর্য চর্চায় আইকন ফারহানা চৈতি

1689

ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : সৌন্দর্য চর্চায় বেশ পরিবর্তন এসেছে। এখন আর আগের মতো মেক আপের প্রয়োজন হয় না। এই পরিবর্তনটা মূলত শুরু হয় ২০১০ সালের শুরুর দিকে। আর এই পরিবর্তনের অনেকটা সঙ্গী ফারহানা চৈতি।
মেক আপ এক্সপার্ট বা আর্টিস্টদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অনেক কৌতূহল থাকে। এই কৌতূহলের জায়গা থেকেই সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ ফারহানার চৈতির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
আলাপে তিনি মেক আপ প্রেমীদের জন্য তিনি নিজের ভালো লাগা এবং স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে দিয়েছেন দারুণ কিছু টিপসও।
ফারহানা চৈতি একজন সার্টিফাইড বিউটি এক্সপার্ট এবং ভিন্নধর্মী মেক আপ আর্টিস্ট। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেই। ফারহানা চৈতির ফ্যাশন হচ্ছে মেক আপ।
তিনি জানান, মেক আপের ওপর দক্ষতা আরো পোক্ত করতে চেয়েছিলেন চৈতি। তাই তিনি ভিন্নধর্মী মেক আপের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের এমবিসি বিউটি একাডেমি থেকে এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করেন। ফ্যাশন ও স্টাইলের ব্যাপারে সবসময়ই তার আলাদা অনুভূতি ছিল।
চৈতির মতে, আমার স্বামীর কাজের সুবাদে কোরিয়া গিয়েছিলাম। সেখানেই মেক আপের জগতে প্রবেশের সুযোগ পাই।
‘আপনারা জানেন, সিউলকে এশিয়ার ফ্যাশন, মেক আপ এবং স্টাইলের শীর্ষস্থানীয় প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। সেই জায়গা থেকেই মেক আপে আন্তর্জাতিক একাডেমিক এবং পেশাদার শিক্ষাগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিই।’
চৈতি বলেন, সিউলে এমবিসি বিউটি একাডেমিতে কাজ করার মাধ্যমে আমি দেখেছি, মেক আপ মানুষের আবেগ, কৌতূহল এবং মনোভাব দ্বারা পরিচালিত শিল্প এবং বিজ্ঞানের ফিউশন। আমি কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় পেশাদার মেক আপ আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এই কাজের সূক্ষ্মতা, ব্যাপকতা এবং ন্যাচারাল মেক আপের ওপর দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ পেয়েছি।
‘তখন থেকেই মনে হলো মেক আপ আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে এই আবিষ্কারের সঙ্গেই থাকতে পারি সব সময়।’
তিনি বলেন, নিজেই নিজের মেক আপ করা আর অন্যের মেক আপ করিয়ে দেওয়া দুটো এক নয়। অন্যকে মেক আপ করিয়ে দেওয়া বেশ কঠিন।
চৈতি বলেন, যদি মেক আপটাকে পেশা হিসেবে নিতে চান তাহলে একে ভালোবাসতে হবে। এটিকে ভালোবেসেই কাজটি করতে হবে।
তিনি বলেন, ফারহানা চৈতি মেকওভার ফিনেস নামে স্টুডিও দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন,আমি বিশ্বাস করি যে, সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস, মনোভাব এবং নিজেকে ভালোবাসার মাধ্যমে শুরু হয়। মেক আপের আন্তর্জাতিক বাজার খুবই পেশাদার এবং সেখানে প্রতিনিয়ত অনেক আধুনিক প্রযুক্তি, কৌশল এবং সৃজনশীলতার ব্যবহার হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির সৌন্দর্য তার আত্মবিশ্বাস এবং পজেটিভ মনোভাব দিয়ে শুরু হয়। আবেগ, পরিপূর্ণতা এবং সৃজনশীলতার সঙ্গে চেহারাকে ফুটিয়ে তোলাই মেকআপ শিল্পীর কাজ।
সিউলে থাকার সময় ফারহানা চৈতি গ্লোবাল বিউটি এক্সপো ২০১৭-তে অংশ নিয়ে বিয়ের মেক আপে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিউটি এক্সপোতে অংশ নেন বিভিন্ন হেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’সহ কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকের শীর্ষস্থানীয় বারোটি দেশের হেয়ারস্টাইলিস্টরা। সেখানে চৈতিও অংশ নেন।
মালয়েশিয়ায় থাকাকালে ফারহানা চৈতি নিয়মিত ফেমিনাইন ম্যাগাজিন, অ্যাস্ট্রো টিভি এবং প্রবাসী বাঙালিদের কমিউনিটি কুয়ালালামপুর-এর মেক আপ এবং হেয়ারস্টাইলিস্ট হিসাবে পার্টি মেকআপ, বিয়ের মেকআপ থেকে থিম মেকআপ-বিষয়ে কাজ করেছেন।
চ্যালেঞ্জ বিষয়ে চৈতি বলেন, একজন মেকআপ আর্টিস্টের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তার ক্লায়েন্ট কী চায় এবং তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। অনুষ্ঠানের ড্রেসআপ এবং ক্লায়েন্টের মুখের বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনা করেই মেক আপ আর্টিস্ট খুব সহজেই জানেন যে, কী ধরনের চেহারাটি এই ক্লায়েন্টটির জন্য উপযুক্ত।
তার মতে, সবারই নিজের ত্বক ও ত্বকের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মেক আপের পণ্য বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। ত্বকে কী ধরনের পণ্য স্যুট করে সে সম্পর্কে কিছুটা হোমওয়ার্ক করে নেওয়া ভালো। বিউটি এক্সপার্টদের সাথে পরামর্শের পাশাপাশি ভিডিও টিউটোরিয়াল এবং মেক আপ সংক্রান্ত ব্লগগুলো পড়া সবসময় সহায়তা করে সঠিক পণ্য বাছাই করতে।
তিনি বলেন, তিনি যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ট্রেন্ড অনুযায়ী মেকআপ এবং নতুন নতুন ফিউশনের মাধ্যমে ন্যাচারাল মেকআপ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিতে সেই প্রবণতা সৃষ্টি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।