কুমিল্লার নিমসার বাজারের সবজির হাটের সুনাম দেশব্যাপী

548

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : ভোর পৌনে পাঁচটা। শীতের সকাল। ঘন কুয়াশার কারণে চারিদিক তখনো অন্ধকার। তারও আগে থেকে ক্ষেতের ফুলকপি আহরণে ব্যস্ত কৃষক। কৃষক আলআমিন, আনোয়ার জানালেন, সেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর থেকেই নিমসার সবজির হাট বসে। তার আগেই সবজি তুলে পরিস্কার করে হাটে নিতে হয়। তাই তাদের কর্মব্যস্ততা শুরু হয় সেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে। কুমিল্লার নিমসার সবজির হাটে প্রতিদিন কেনাবেচা হয় কোটি কোটি টাকার সবজি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ সবজি চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ আশেপাশের বাজারে। নিমসার এ সবজির হাটটির সুনাম দেশব্যাপী। এ হাটে সবজি কেনাবেচা করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। মহাসড়কের পাশে হওয়ার কারণেই হাটটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশেই বুড়িচং উপজেলার নিমসার এলাকায় সবজির বড় হাট বসে। প্রতিদিন ভোর দুপুর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সবজি কেনা বেচায় সরগরম থাকে হাটটি। জেলার বিভিন্ন এলাকার উৎপাদিত নানা জাতের সবজির দেখা মিলে এ হাটে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাােল থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এ হাটে বিক্রির জন্য আসেন। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় পাইকাররাও খুব সহজেই সবজি পরিবহন করে ঢাকায় নিতে পারছেন। এ হাটের সবজি বিক্রেতা আলমগীর জানান, তিনি ৪০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে শুধু সবজি আর সবজি। এ যেন সবজি চাষীদের মিলনমেলা। এ রকম দৃশ্য চোখে পড়ে নিমসার সবজি হাটে। সেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর থেকে চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে এ সবজির হাট। এ হাট থেকে শত শত টন সবজি প্রতিদিন ট্রাকে করে চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অপর সবজি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ হাটে তোলা সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে মূলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, বরবটি, লাউ. বেগুন, ওলকপি, টমেটো, লাউশাক, লাল শাক, শসা, পালংশাক, ধনেপাতা এছাড়াও এ হাটে এমন কোন সবজি নেই যে পাওয়া যায় না। হাটের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুম জানান, স্থানীয় এ সবজি টাটকা ও তরতাজা হওয়ায় বাজারে এর ভালো চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য হাটের তুলনায় এ হাটে দরদামও সস্তা।হাটের আড়তদার রতন চৌধুরী জানান, এ হাটে কুমিল্লার বুড়িচং, চান্দিনা ও দেবিদ্বারসহ আশপাশের জেলা থেকে ভালো মানের সবজি আসে। তাছাড়া হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থাকায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই অনুকূল পরিবেশ বিরাজমান। প্রতিদিন এ হাটে প্রায় ১ থেকে ৫ কোটি টাকার সবজি কেনা বেচা হয়। ঢাকার কাওরান বাজার থেকে হাটে আসেন কাঁচা মাল ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়া। তিনি জানান, আশেপাশের অনেক হাটের তুলনায় নিমসার বাজারে প্রতি মণ সবজির দাম ১০০-২০০ টাকা কমে পাওয়া যায়। আর তরতাজা সবজি মেলে এ হাটে। শুধু মাত্র কাওরান বাজরের ব্যবসায়ীরা নন, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা, চাঁদপুর জেলা, নোয়াখালী জেলা, মুন্সীগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে এ হাট এখন বিশেষ ভাবে পরিচিত। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, তুলনামূলক সস্তা এবং তাজা সবজি পাওয়ার পাশাপাশি এ হাটের আরও সুবিধাজনক দিক হচ্ছে সড়ক পথে এখান থেকে সবজি বিভিন্ন স্থানে নেওয়া যায়। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে আসা কাঁচামাল ব্যবসায়ী মোঃ তমিজ উদ্দিন বলেন, অন্যান্য হাট থেকে সবজি আনতে হলে এ হাটে চাঁদার হয়রানি নেই। কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, নিমসার ও পাশের এলাকাগুলোতে প্রচুর সবজি চাষ হয়। এ চাষকে নির্বিঘ্ন করতে মাঠকর্মীরা নিরলসভাবে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন।