বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সাধারণ জনগণের উন্নতি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত : প্রধানমন্ত্রী

120

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-উন্নয়ন
সাধারণ জনগণের উন্নতি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাঁর ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের মধ্যদিয়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা এবং চিকিৎসা পাবে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়ে গেছেন তাতে সকলের এই মৌলিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
’৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যাকান্ডকে একটি ‘কালো অধ্যায়’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন ক্ষমতায় আসে তখন নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আর নিজেদের ক্ষমতার ভিত্তিটাকে শক্ত করার জন্য সমাজে একটি এলিট শ্রেণী তৈরী করে। সাধারণের জন্য কিছু করে না। যে কারণে ’৭৫’র পর এদেশের মানুষ সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত ছিল।’
‘আর আমরা যারা রাজনীতি করি তাঁদের লক্ষ্যই থাকে জনগণের কল্যাণ, তাঁদের সার্র্বিক উন্নতি’, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রামীন জনগণকে সঙ্ঘবদ্ধ করে সমবায় ভিত্তিক কৃষিকে উৎসাহিত করাই তাঁর সরকারের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে বলেন, ‘এক সময় আমিও ক্ষুদ্রঋণে উৎসাহিত করতাম কিন্তু দেখা গেল ঋণের পরিমান এক সময় এত বেড়ে যায় যে, এক সময় মানুষ ঋণগ্রস্থ হয়ে হয় আত্মহত্যা করে, না হয় ঘর-বাড়ি, ভিটে-মাটি বিক্রী করে একেবারে নি:স্ব হয়ে যায়। সে আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য কখনোই এই ক্ষুদ্র ঋণ কার্যকর হয়না।’ কাজেই একটা মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে তাঁর সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয় ভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে আমার বাড়ি আমার খামার) প্রকল্প শুরু করে। অর্থাৎ কৃষিভিত্তিক উৎপাদনের বাজারজাত হবে সমবায় ভিত্তিক, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দরিদ্রদের সঞ্চয়কে সুরক্ষিত রাখার জন্যই তাঁর সরকার ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ চালু করেছে। তিনি প্রবাস গমনেচ্ছু এবং নবীন উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে তাঁর সরকারের প্রতিষ্ঠিত ‘কর্মসংস্থান’ বাংকের নানা দিক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের সময় মোবাইল ফোনকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দেয়ার ফলে সারাদেশের সকলের হাতে মোবাইল ফোন চলে এসেছে।
তিনি এ সময় দেশের সাড়ে ৩ হাজার ইউনিয়নে ইন্টারনেট ব্রডব্রান্ড সেবা পৌঁছে দেওয়া, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণসহ তথ্য প্রযুক্তি খাতে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
তিনি ‘লেনদেন’ ভিত্তিক মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধনের ফলে সৃষ্ট নানা সুযোগ-সুবিধারও উল্লেখ করেন ।
প্রধানমন্ত্রী রেল যোগাযোগের উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে বলেন, ‘পাবনা, ঢালারচর, জামালপুরসহ আরো বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। রেলের মাধ্যমে মানুষ যেমন নিরাপদে যেতে পারে আবার যাতায়াতও সাশ্রয়ী হয়। সে কারণে আমরা রেল সার্ভিসের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এইক্ষেত্রে রেলওয়ের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে যে, আমরা রেল লাইন বাড়াচ্ছি এবং নতুন নতুন বগি এবং যাত্রী পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। তবে, রেলের পুরনো ব্রীজগুলো, কালভার্টের ওপর ব্রিজসহ বিভিন্ন রেল ব্রীজগুলো মেরামত করতে হবে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এগুলো অত্যন্ত পুরণো হযে যাওয়ায় রেল চলাচলে বিঘœ সৃষ্টিসহ যাত্রী নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
তিনি পূর্ববর্তী সরকারের (বিএনপি) আমলে রেল বন্ধ করে দেওয়ায় বিভিন্ন রেলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই এমনটি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘সে সময়কার সরকারের এটি একটি আত্মঘাতি সিদ্ধান্তÍ ছিল।’
‘যে কারণে বছরের পর বছর চলে গেছে এসব ব্রিজ মেরামত করা হয়নি। তারা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলের লোকবলকে বিদায় করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গার লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। সারাদেশে সার্ভে করে যেখানে যত পুরনো রেল ব্রিজ আছে সেগুলো মেরামত করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
এ জন্য একটা প্রকল্প গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর আমরা অনেক পানি শোধনাগার করেছি। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা পানি শোধনাগার করেছি। আমার একটা অনুরোধ থাকবে, পানি ব্যবহারের সময় যেন সবাই মিতব্যয়ী হই।’
তিনি বলেন, অনেক টাকা খরচ করে পানি শোধন করে সেই পানি সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে নোনা পানির জন্য খুলনাবাসীর পানির অভাব তীব্র ছিল।
তিনি আরো বলেন, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য মধুমতি নদী থেকে পানি এনে শোধন করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ১ লিটার পানি শোধন করতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। কাজেই পানির অপচয়টা সবাই বন্ধ করবেন। কল ছেড়ে দিয়ে ব্রাশ করা, সেভ করা বা কল ছেড়ে দিয়ে গোসল করা -এগুলো কেউ করবেন না। প্রয়োজনে বালতি ও মগ ব্যবহার করবেন।

বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগের সুবিধার জন্য আমরা বিভিন্ন জেলায় সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি। যোগাযোগের ফলে প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, হরিরামপুর মানিকগঞ্জ এমন একটি এলাকা যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্যা হতো। সবসময় এখানে বন্যা লেগেই থাকত। এখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা খুব অনুন্নত ছিল। সেখানে আমরা ব্রিজ করে উন্নত যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি।
তাঁর সরকার জনগণের বিনোদন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, চট্টগ্রাম টেলিভিশনের সম্প্রচারেরর সময় বাড়ানোর উদ্দেশ্যটা হলো, চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের কালচারাল অনুষ্ঠানগুলো মানুষ দেখতে পারবে। সেখানে স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরাও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটা মানুষের ভেতরে যে সুপ্ত মেধা রয়েছে সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটবে এই টেলিভিশন কেন্দ্রের মাধ্যমে। সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ বিকশিত হওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হবে। আমাদের যারা সংস্কৃতিকর্মী তাদেরও সুবিধা হবে। এছাড়া এখানে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, আজ এখানে বসে আমরা রেল যোগাযোগ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ব্রিজ নির্মাণ, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার, বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করলাম। এখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে দেখলেন যে, কোন মন্ত্রণালয়ের কী উন্নয়ন হয়েছে। এতে উন্নয়নের দিকগুলো জানার একটা সুযোগ হলো।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭২৭/-শআ