বাসস ক্রীড়া-১৮ : শান্তর সেঞ্চুরিতে প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে রাজশাহীর সঙ্গী খুলনা

441

বাসস ক্রীড়া-১৮
ক্রিকেট-বঙ্গবন্ধু বিপিএল
শান্তর সেঞ্চুরিতে প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে রাজশাহীর সঙ্গী খুলনা
ঢাকা, ১১ জানুয়ারি ২০২০ (বাসস) : বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তর অনবদ্য সেঞ্চুরিতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে নাম লেখালো খুলনা টাইগার্স। আজ লিগ পর্বের ৪২তম ও শেষ ম্যাচে শান্তর ৫৭ বলে অপরাজিত ১১৫ রানের কল্যাণে ঢাকা প্লাটুনকে ৮ উইকেটে হারায় খুলনা। এই জয়ে ১২ ম্যাচ শেষে ১৬ পয়েন্ট খুলনার। একই অবস্থা রাজশাহী রয়্যালস ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সেরও। কিন্তু রান রেটে সবার উপরে খুলনা। দ্বিতীয় স্থানে রাজশাহী। তৃতীয়স্থানে চট্টগ্রাম। ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে ঢাকা। তাই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দু’দল খুলনা-রাজশাহী টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে মুখোমুখি হবে। আর এলিমিনেটরে খেলবে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় ও চতুর্থ দল যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও ঢাকা। আগামী ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে প্রথম কোয়ালিফাইয়ার ও এলিমিনেটর।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ওপেনিং স্লটে পরিবর্তন আনে ঢাকা প্লাটুন। নিয়মিত ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের পরিবর্তে তামিম ইকবালের সাথে ইনিংসের শুরুতেই নামেন মোমিনুল। দ্বিতীয় ওভারে ধাক্কা খায় ঢাকা। দক্ষিণ আফ্রিকার রবি ফ্রাইলিঙ্ককে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন ১ রান করা তামিম। তার ক্যাচটি লুফে নেন আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান রিলি রুশো।
এরপর উইকেটে আসেন অফ-ফর্মে থাকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান এনামুল। ১০ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। ফ্রাইলিঙ্ককের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। এনামুলের মত ব্যর্থ হয়েছেন চার নম্বরে নামা জাকের আলিও। তবে মারমুখী মেজাজেই নিজের ইনিংস শুরু করেছিলেন তিনি। ১টি করে চার-ছক্কায় ৭ বলে ১৪ রান করেন জাকের।
৫ দশমিক ৪ ওভারে দলীয় ৩৫ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন জাকের। তার আউটের পর মোমিনুলের সাথে জুটি বাঁধেন মেহেদি হাসান। টানা দু’টি হাফ সেঞ্চুরির কল্যানে এবারের আসরে পিঞ্চ হিটার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ ব্যাটসম্যান আজ ব্যাট হাতে নামেন নামে আজ পাঁচ নম্বরে।
শুরুর ধাক্কাটা সামলাতে গিয়ে ধীরলয়ে খেলতে থাকেন মোমিনুল ও মেহেদি। তবে রানের চাকাটা সচল রেখেছিলেন তারা। ৯ ওভার শেষে ৫৭ রান স্কোরবোর্ডে তুলেন মোমিনুল-মেহেদি। ১৪ ওভার শেষে ছিলো ১২৯ রান। ১৫তম ওভারে প্রথম তিন বলে দু’টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১তম বলে টি-২০ ক্রিকেটে নবম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মোমিনুল। খুলনার পেসার শফিউল ইসলামের ঐ ওভার থেকে ২১ রান পায় ঢাকা।
হাফ-সেঞ্চুরির পর বিধ্বংসী রুপ নেন মোমিনুল। চার-ছক্কায় ফুলঝুড়ি ফুটান তিনি। তাই ১৬তম ওভারেও ১টি করে চার-ছক্কায় দলকে ১৫ রান এনে দেন মোমিনুল। বোলার ছিলেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির। ১৭তম ওভারেও ১টি করে চার-ছক্কা ছিলো মোমিনুলের। এবার বোলার পেসার শহিদুল ইসলাম।
শফিউলের করা ১৮তম ওভারটি ছক্কা দিয়ে শুরু করেন মেহেদি। চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন মোমিনুলও। এ ওভার থেকে আসে ১৯ রান। এতে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগে মোমিনুলের। কারন ৫৬ বলে ৮৮ রান শোভা পাচ্ছিলো তার নামের পাশে। তবে হাফ-সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন মেহেদি।
১৯তম ওভারের বাউন্ডারি দিয়ে ৩১তম বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মেহেদি। বাউন্ডারি দিয়ে হাফ-সেঞ্চুরির পরের বলেই আমিরকে ছক্কা মারেন মেহেদি। ওভারের শুরুটা দুর্দান্ত হলেও, শেষটা ভালো হয়নি ঢাকার। কারন ওভারের শেষ ডেলিভারিতে নাভার্স-নাইন্টিতে আউট হন মোমিনুল। আমিরের বলে ফ্রাইলিঙ্ককে ক্যাচ দিয়ে নামের পাশে ৯১ রান রেখে আউট হন মোমিনুল। তার ৫৯ বলের ইনিংসে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। মেহেদির সাথে ৮০ বলে ১৫৩ রানের জুটি গড়েন মোমিনুল। এরমধ্যে ৪৭ বলে মোমিনুল ৮৩ ও মেহেদি ৩৩ বলে ৫৭ রান করেন।
মোমিনুলের বিদায়ের ওভারে ১৪ রান পায় ঢাকা। শেষ ওভারে মেহেদির একটি করে চার-ছক্কার সাথে শ্রীলংকার থিসারা পেরেরার ১টি বাউন্ডারিতে ১৭ রান পায় ঢাকা। এতে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২০৫ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ঢাকা। শেষ ১১ ওভারে ১৪৮ রান পায় ঢাকা। খুলনার ফ্রাইলিঙ্ক ৩৫ রানে ২ উইকেট নেন।
ঁপডা ঁনত ২০৬ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন খুলনার দুই ওপেনার শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ৪১ বলে ৭০ রান যোগ করেন তারা। এরমধ্যে ২৫ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ঢাকার মেহেদির বলে বোল্ড হন মিরাজ।
মিরাজের মারমুখী ব্যাটিং-এ নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন শান্ত। পাওয়ার প্লেতে তার রান ছিলো ১৩ বলে ১৫ রান। মিরাজের বিদায়ের পর উইকেটে চারপাশে চার-ছক্কার পসরা বসান শান্ত। ঢাকার বোলারদের তুলোধুনো করে ২৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার রিলি রুশোকে নিয়ে ৩৯ বলে ৮১ রান যোগ করেন শান্ত। ১৭ বলে ২৩ রান করে রুশো ফিরলেও, এবারের আসরে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। ৫১ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। সেঞ্চুরির ইনিংসে ৭টি চার ও ৬টি ছক্কা মারেন শান্ত। এবারের আসরের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করে ১১ বল বাকী রেখেই খুলনার জয় নিশ্চিত করেন শান্ত। ৫৭ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত। ৮টি চার ও ৭টি ছক্কা মারেন তিনি। তার সাথে ১০ বলে ৩টি চারে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ম্যাচ সেরা হন শান্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ঢাকা প্লাটুন : ২০৫/৪, ২০ ওভার (মোমিনুল ৯১, মেহেদি ৬৮*, ফ্রাইলিঙ্ককে ২/৩৫)।
খুলনা টাইগার্স : ২০৭/২, ১৮.১ ওভার (শান্ত ১১৫*, মিরাজ ৪৫, শাদাব ১/৩২)।
ফল : খুলনা টাইগার্স ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : নাজমুল হোসেন শান্ত(খুলনা টাইগার্স)।
বাসস/এএসজি/এএমটি/২২৫৫/স্বব