দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে রাষ্ট্রপতির আহবান

763

সংসদ ভবন, ৯ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহিদের রক্তের ঋণ পরিশোধের আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সকলকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।’
আজ সংসদের ২০২০ সালের প্রথম অধিবেশন ও একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সকল স্তরে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হবে।
মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ বছর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে, ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে – এটাই জাতির প্রত্যাশা।’
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা; সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল; নারীর ক্ষমতায়ন; শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও বিকাশ; জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনিসেফ কর্তৃক মর্যাদাপূর্ণ ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করা হয়।
সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ, ২০১৮’ চূড়ান্ত করে গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক ৪৫ শতাংশ মহার্ঘ-ভাতা সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনাজনিত আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সহকারে স্ব-স্ব ধর্ম চর্চা করতে পারে সে ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবসমূহ নির্বিঘ্নে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হচ্ছে। ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জনমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
ক্রিড়া ক্ষেত্রের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১২৫টি ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২ মার্চকে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সাইবার অপরাধ তদন্তের জন্য মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত করার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করায় এক্ষেত্রে সরকার ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের আওতায় মোট ৪১১টি ফায়ার স্টেশন চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ই-পাসপোর্ট শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে। কারাগারসমূহকে সংশোধনাগারে রূপান্তরসহ ১৬টি কারাগার নতুনভাবে নির্মাণ এবং ২টি কারাগার সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
দুর্নীতি, জুয়া, মাদক, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনে গৃহীত কর্মসূচিসমূহ এবং ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’র সমন্বয় ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির মহাসড়কে সংযুক্ত করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার এ সকল কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ আজ এশিয়ার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরপর তিনটি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি পবৃদ্ধি অর্জনের পর গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৮ দশমিক দুই শতাংশ। দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে। গত এক দশকে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ।’
তিনি বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক চার-নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্লোবাল কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১টি দেশের মধ্যে ৯৫তম। বিশ্বব্যাংকের হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স ২০১৮-তে ১৫৭টি দেশের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১০৬তম।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিগত দশ বছরে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় চারগুণ হয়েছে। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করছি।
তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের ইজি অব ডুয়িং বিজনেস-এর সার্বিক ক্রমে বাংলাদেশের অবস্থানের আট ধাপ উন্নতি হয়েছে। দেশি-বিদেশি শিল্প-উদ্যোক্তাগণ কর্তৃক শিল্প স্থাপনের সুবিধার্থে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমির উপর ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের পণ্য ও সেবা খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৬ দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে দেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, সরকারের যুগপোযোগী আমদানি রপ্তানি নীতি ও বাণিজ্যিক কূটনীতি গ্রহণের ফলে ভবিষ্যতে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।
পোশাক শিল্প সেক্টরের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১ হাজার ৬৬২ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প কারখানাসমূহে কর্মরত শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৪ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষি উন্নয়নে সফলতা বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমন্ডলে মর্যাদার নতুন আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু উৎপাদনে অষ্টম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দেশ। সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অগ্রগতি, অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতসমূহ সুষমভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৪,৯১৯ জন চিকিৎসক ও ৫ হাজার ৯২ জন নার্স নিয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, স্থূল জন্মহার, স্থূল মৃত্যুহার, প্রজনন হার ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে এবং গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুদের সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভেকসিন এন্ড ইমুনাইজেশন কর্তৃক ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।’
সুশিক্ষিত ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মাধ্যমে সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত মোট ৪ কোটি ২৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৫ কোটি ৩৯ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৯৭ কপি পাঠ্য পুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে হতে ১ হাজার ৬৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়েছে। ১ হাজার ২৩৩ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, ১ হাজার ৮০০টি মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণ কার্যক্রম চলমান আছে। বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গঠনে ৪৯২টি উপজেলা এবং ৪০টি ইউনিয়ন বিজ্ঞান ক্লাব গঠন করা হয়েছে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের অভিযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ৭ হাজার ৫৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য মানসম্মত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিগত এগারো বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২২ হাজার ৭৮৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ হতে ৯৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে।
দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ১৬টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলেও রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন।